প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর মধু
- অনির্বান গোস্বামী
- প্রকাশ: ০৯ মে ২০২২, ০৯:১১ PM , আপডেট: ০৯ মে ২০২২, ০৯:১১ PM
নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই মধু উপকারিতা স্বীকৃত। কেননা মধুতে থাকা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ মন্টোজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদনের এক অনন্য উপকরণ মধু।
জানা যায়, মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ১০০ গ্রাম ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি, ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনকাইম। এছাড়া ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ। তবে মধুতে চর্বি ও প্রোটিন কোন উপাদান নেই।
আরও পড়ুন: পুষ্টি উপাদানে ভরপুর কলা
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মধুর উপকারিতার কথা জানা যায়। কেননা রাসুল (সা.) মধুকে উত্তম ওষুধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রাচীন গ্রীক ধর্মে জিউস এবং অলিম্পাসের বারো দেবতার খাদ্য হিসেবে অমৃত আকারে মধু কথা বলা হয়েছে। এমনকি বেদ ও অন্যান্য প্রাচীন সাহিত্যেও মধুকে একটি মহাঔষধি বলে অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। নিম্নে মধুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
** মধু ওজন হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কারণ মধুতে কোন চর্বি উপাদান নেই। বিখ্যাত লেখক পুষ্টিবিদ মাইক ম্যাকইনেসের মতে, ঘুমানোর আগে এক চামুচ মধু শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। তাই ওজন কমানোতে মধু অন্যতম সেরা খাবার।
আরও পড়ুন: দৈহিক সুস্থতা ও সৌন্দর্য বর্ধনে শসার উপকারিতা
** মধু দেহের ইমিউনো সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এছাড়া মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। তাই ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে অথবা ওয়ার্কআউট করার আগে মধু খাওয়ার পরামর্শ দেন।
** মধু ত্বকের পুষ্টি যোগাতে সহায়তা করে। কারণ এতে ময়শ্চারাইজিং ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হওয়ায় মধু ক্ষত, কাঁটাছেড়া, পোড়া ও ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণ উপকারী ভূমিকা রাখে। এমনকি শীতকালে ফাটা ঠোঁট সারানোর পাশাপাশি শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
** মধু স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। কারণ মধুতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যগুলি মস্তিষ্কের কোলিনার্জিক সিস্টেমের সঞ্চালন ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসকারী কোষগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ফলে বিপাকীয় চাপ প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ককে শান্ত রাখার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায়তা করে।
** সর্দি-কাশির ঘরোয়া প্রতিকারে মধু বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, এক টেবিল চামচ মধু সেবনে গলার জ্বালাপোড়া কম হয়। এমনকি এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট সর্দিকাশি সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। হাঁপানি রোগেও বেশ উপকারী মধু।
** মধু খুশকিকে ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কারণ মধু শুষ্ক চুলে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের পাশাপাশি মসৃণ ও নরম করে চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: আখের রসের স্বাস্থ্য উপকারিতা
** মধু প্রাকৃতিকভাবে ঘুমের সহায়তা করে। তাই ঘুমানোর ঠিক আগে উষ্ণ দুধ এবং মধু দিয়ে পান করলে দ্রুত ঘুম আসে। তাই রাতে ঘুমের সমস্যা হলে মধু যোগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করা যেতে পারে।
** মধু সাইনাস সমস্যা বেশ কার্যকরী। আজকাল ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ ও ধূলিকণার ফলে অনেক সাইনাসের সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু মধুতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াম এবং অ্যান্টি-সেপটিক সংক্রমণ দূর করার পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
** মধু মুখের রোগ সারাতে সাহায্য করে। কারণ মধু অ্যান্টিসেপটিক হাইড্রোজেন পারক্সাইড নির্গত করে, যা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসাবে কাজ করার ফলে দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।