আমের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য উপকারিতা

আমের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে
আমের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে  © প্রতীকী ছবি

সহজে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ফল হল আম। স্বাদে ও গন্ধে অনন্য এ ফল প্রায় সকলের কাছেই প্রিয়। আমে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান দেহ গঠন ও রোগমুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুস্বাদু এ ফল নিযমিত খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায়।

জানা যায়, প্রায় ৪ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় মানুষরা আমের চাষ করছেন। শতাধিক প্রকারের আমের মধ্যে প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্বাদ, আকৃতি, আকার এবং রঙ রয়েছে। শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টি উপাদানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ এ ফল। এই আমে থাকা বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টি উপাদান দেহগঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস ও মানব ভ্রুণের বিকাশসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে।

এক কাপ সমান (১৬৫ গ্রাম) তাজা আমে রয়েছে ৯৯ ক্যালোরি। এছাড়া ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ২৪.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ২.৬ গ্রাম ফাইবার, ২২.৫ গ্রাম চিনিসহ ভিটামিন সি (ডিভি) ৬৭ শতাংশ, তামা ২০ শতাংশ, ফোলেট ১৮ শতাংশ, ভিটামিন বি৬ ১২ শতাংশ, ভিটামিন ই ১০ শতাংশ, ভিটামিন কে ৬ শতাংশ, নিয়াসিন ৭ শতাংশ, পটাসিয়াম ৬ শতাংশ, রিবোফ্লাভিন ৫ শতাংশ এবং ম্যাগনেসিয়াম ও থায়ামিন ৮ শতাংশ রয়েছে।

আরও পড়ুন: ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায়

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ্য থাকতে আমের প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাই চলুন আমের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জেনে নেই।

আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • আম খনিজ কপার এবং ফোলেটের একটি ভাল উৎস। যা গর্ভাবস্থায় সুস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটি কাজ করে।
  • আমে ক্যালোরি কম থাকলেও পুষ্টিগুণ বেশি। বিশেষ করে ভিটামিন সি, আয়রন শোষণ ক্ষমতা এবং কোষের বৃদ্ধি ও মেরামত করতে সহায়তা করে। খাবারের শুরুতে আমের মতো তাজা ফল খেলে আর অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে আমে ফ্যাটের পরিমান বেশি থাকায় পরিমিত পরিমাণ গ্রহণের পরামর্শ দেন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরা।
  • আমে ম্যাঙ্গিফেরিনসহ এক ডজনেরও বেশি বিভিন্ন ধরণের পলিফেনল রয়েছে। পলিফেনল দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এরা কোষে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যাল মোকাবেলা করে। বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ম্যাঙ্গিফেরিন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসুস্থতার সাথে যুক্ত ফ্রি র‌্যাডিক্যালকে মোকাবিলা করে দেহকে সুস্থ রাখে।
  • আম ফোলেট ও বেশ কয়েকটি ভিটামিন বি ছাড়াও ভিটামিন এ, সি, কে এবং ই-এর একটি ভাল উৎস। ভিটামিন এ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে এবং ভিটামিন সি দেহে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়া এসব ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেহকে সুস্থ্য রাখতে ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন: লাউয়ে আছে যত উপকার

  • আম প্রাণীদেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সরবরাহ করে হার্টকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। ফলে দেহে সুষ্ঠু রক্ত ​​প্রবাহ বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তনালীগুলি শিথিল রাখে এবং নিম্ন রক্তচাপের মাত্রা কমায়। আম হার্টের প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও কোষের মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া আম রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
  • আম হজম প্রক্তিয়ায় খুবই সহায়ক। কেননা আমে থাকা অ্যামাইলেসেস পাচক এনজাইম বড় খাদ্য অণুগুলিকে ভেঙে সহজেই দেহকে শোষণক্ষম করে তোলতে সাহায্য করে। এছাড়া আমে প্রচুর পরিমাণে থাকা পানি ও ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • আম চোখের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চোখের রেটিনাকে রোগ জীবানু থেকে রক্ষা করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো রেটিনার ম্যাকুলায় ঘনীভূত হয়ে একটি প্রাকৃতিক সানব্লক হিসাবে কাজ করে এবং ক্ষতিকারক নীল আলো থেকে চোখকে রক্ষা করতে সহায়তায় করে। তাছাড়া আমে থাকা ভিটামিন-এ চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা রোগ প্রতিরোগে সহায়তা করে।
  • আম প্রকৃতিকভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। কারণ আমে থাকা পলিফেনল অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি কোলন, ফুসফুস, প্রোস্টেট, স্তন এবং হাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আমে থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন পলিফেনল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি লিউকেমিয়া এবং কোলন, ফুসফুস, প্রোস্টেট এবং স্তনের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
  • কাঁচা আম লোমকূপ পরিষ্কার কারার পাশাপাশি ব্রণ ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি মাড়ি সমস্যাসহ দাঁতের ক্ষয় এবং রক্তপাত রোধে কাঁচা আম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মানকে ভালো রাখাসহ লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম খাওয়া উপকারী। কারণ এটা বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে। 

সর্বশেষ সংবাদ