শীত এলেই কাশি বাড়ে? জেনে নিন ঘরোয়া উপায়

শীত এলেই সর্দি-কাশির সমস্যা অনেকাংশেই বেড়ে যায়
শীত এলেই সর্দি-কাশির সমস্যা অনেকাংশেই বেড়ে যায়  © সংগৃহীত

শীত এলেই সর্দি-কাশির সমস্যা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। অনেকেই এই ঠান্ডা কাশিকে সাধারণ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করেন। সময় মতো এই সমস্যার চিকিৎসা না করালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে শ্বাসযন্ত্রে। অনেকের এই শুকনো কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তীব্র যন্ত্রনা দেয়। এ সমস্যা আমাদের ভোগায় দীর্ঘদিন। দেখা যায় ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এর রেশ থেকেই যায়।

শুকনো কাশি রাতের ঘুম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ। ঘরোয়া অনেক উপাদান আছে যা নিয়মিত ব্যবহারে শুকনো কাশির পরিমাণ কমে। তবে এতে একটু বেশি সময় লাগলেও চিন্তা করার কিছু নেই। কাশি হলেই হুট করে এন্টি-বায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

শীতের শুকনো কাশি কমাতে আসলে সবচেয়ে যা প্রয়োজন, তা কোন ঔষধ নয়। বরং ধুলাবালু, ঠান্ডা কুয়াশা থেকে দূরে থাকা। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বাইরে যেতে মাস্ক ব্যবহার করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করে, ঘনঘন আদা, লেবু, মধু, লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদি দেওয়া গরম চা বা পানীয় পান করলে আরাম পাওয়া যায়।

কাশি হওয়ার কারণ: 
বিভিন্ন কারণেই কাশি হয়ে থাকে। অনেক সময় ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি কারণেও কাশি হয়। এ ক্ষেত্রে কাশি দীর্ঘদিন চলতেই থাকে এবং বুকে ব্যথা হয়ে যায়। দেখা দেয় শ্বাসকষ্টসহ আরও বিভিন্ন সমস্যাও। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সারাক্ষণ কাশির ফলে গলাও ব্যথা হয়ে যায়৷ শুকনো কাশি হলে তো আর কথাই নেই৷ চূড়ান্ত কষ্ট পেতে হয় রোগীকে৷ এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের কাছে ছোটেন অনেকেই৷ গুচ্ছ গুচ্ছ ওষুধ আর কফ সিরাপ খেয়ে খেয়ে সারাতে হয় রোগ৷ তবে, ঘরোয়া কিছু টোটকা রয়েছে যার সাহায্যে সহজেই সারানো যায় কাশি

কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়:
* মধু: কাশি উপশমে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে মধুর জুড়ি নেই। মধু কাশি-কফ কমাতে সাহায্য করে। কখনও কখনও ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে মধু। মধু কাশি বা ঠান্ডার জন্য আদর্শ ওষুধ হলেও এক বছর বয়সের নীচে শিশুদের মধু খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়।

মধু

কীভাবে ব্যবহার করবেন : 
ক. এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ মধু, অর্ধেকটা লেবুর রস আর সামান্য আদার রসের মিশ্রণ প্রতিদিন ১/২ বার খেতে হবে। এ মিশ্রণ কফ ও গলা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. গরম দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত পান করলে কাশি উপশম হবে।

গ. দিনে ৩ বার করে ১ টেবিল চামচ মধু খেলেও কাশি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ঘ. এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়া ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান। দিনে ২ বার খেলে কাশি সেরে যাবে।

* এলাচ: প্রত্যেকের বাড়ির রান্নাঘরেই থাকে ছোট এলাচ৷ মশলা হিসেবে নয় শুকনো কাশি থেকেও মুক্তি দিতে পারে ছোট এলাচ৷ সর্দি, কাশি এবং ঋতু পরিবর্তনের জ্বর থেকেও মুক্তি দিতে পারে ছোট এলাচ৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরা এলাচ জীবানুনাশকও৷ গলা ব্যথা এবং শুকনো কাশি হলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এলাচকে কাজে লাগান৷ এমনকী ক্লান্তি দূর করতেও এলাচ দেওয়া চায়ের জুড়ি মেলা ভার৷ এক কাপ পানি নিন, গ্যাসে বসিয়ে তাতে মধু এবং বেশ কয়েকটি ছোট এলাচ দিন। ফুটে গেলে এলাচ ছেঁকে ওই জল পান করুন। ইষদুষ্ণ ওই পানি কয়েকদিন খেলেই কমে যাবে গলা ব্যথা। রেহাই পাবেন শুকনো কাশি থেকেও।

এলাচ
 * বাসক পাতা: বাসক পাতা পানিতে সেদ্ধ করে, সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় খেলে কাশি উপশম হয়। দৈনিক সকালে এই পানি খেতে হবে। বাসক পাতার রস প্রতিদিন সন্ধ্যায় খেলে ভালো। ২-৩ দিনেই এর খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তেতোভাব কমাতে রসের সাথে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন।

* ভাপ নেওয়া: ড্রাই কফের অন্যতম চিকিৎসা হলো গরম পানির ভাপ নেওয়া।   গরম পানির সাথে আপনি প্রয়োজনে এসেনসিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। গরম পানির ভাপ নাক পরিষ্কার রাখে, গলা ব্যথা কমায় এবং কফের পরিমাণও অনেকাংশে কমিয়ে ফেলে।

নিয়ম: ভাপ নেওয়ার জন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তার সাথে এসেনসিয়াল ওয়েল বা ইউক্যালিপটাস অয়েল বা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিন। গরম পানির ভাপ নেওয়ার আগে মাথা তোয়ালে দিয়ে কভার করে নিন। তবে ভাপ নেওয়ার সময় যদি মনে হয় গরমে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে তবে ভাপ নেওয়া বন্ধ করে দিন।

গরম পানি দিয়ে গার্গল: ড্রাই কফের সমস্যা আসলে চিকিৎসকরা সব সময় গরম পানি দিয়ে গার্গল করার কথা বলেন। এটি শ্লেষ্মা বা কফ বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে করে কমে শুকনো কফ।

নিয়ম: এক গ্লাস কুসুম গরম পানি নিয়ে এর মধ্যে হাফ টেবিল চামচ লবণ নিন। গলার ভিতর কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এতে করে গরম পানির ভাপ গলার ভিতর লাগবে। দিনে কয়েকবার গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গরম পানির গার্গলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাচ্চারা লবণ পানি গিলে ফেললে সমস্যা হতে পারে।

* তুলসী পাতা: আয়ুর্বেদে তুলসি ভেষজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সর্দি, কাশির যম তুলসি। তুলসির রস সর্দি-কাশিতে দারুণ কাজ দেয়। শিশুদের জন্য কয়েকটি তাজা তুলসি পাতার রসের সঙ্গে একটু আদার রস ও মধু দিয়ে খেলে খুব উপকার। পানির সঙ্গে তুলসি পাতা, গোল মরিচ ও মিছরি মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করতে হবে। দিনে ৩-৪ বার এই সিরাপ খেলে জ্বর উধাও।

তুলসি পাতা

এছাড়া তুলসী পাতা থেঁতো করে এতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এই মিশ্রণটি দৈনিক ২/৩ বার খেলে কাশি ভালো হয়।

* আদা: আদা ছোট ছোট টুকরা করে তার সাথে লবণ মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর খেতে হবে। এই পদ্ধতি কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। তাছাড়া আদা চা করে খেলেও কাশিতে উপকার পাবেন।

* গরম দুধে হলুদের মিশ্রণ: দুধকে গরম করে এর মধ্যে অল্প হলুদ মেশাতে হবে। এই হলুদমিশ্রিত দুধ কাশি দূর করতে বেশ উপকারী। হলুদ আমাদের সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে। 

* লবঙ্গ: কাশি হলে মুখে একটা লবঙ্গ রেখে মাঝেমধ্যে একটু চাপ দিয়ে রস বের করে গিলে ফেলুন। লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেবে, জীবাণু দূর করবে।

* হলুদ: হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শুকনো কাশির জন্য খুব কার্যকরী। ১ টেবিল চামচ হলুদ এর সঙ্গে ১/৮ টেবিল চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে সেটি চা, দুধ কিংবা অন্য কোন পানীয় যেমন কোনো জুসে্র সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় হলুদ। কাশি কমাতে হলে হলুদের রস খেয়ে নিন কয়েক চামচ, কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন। সেটা করতে না পারলে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। কয়েকবার খেলে নিজেই তফাৎ বুঝতে পারবেন।

হলুদ

* মেন্থল ক্যান্ডি: মেন্থল দিয়ে তৈরী ক্যান্ডি বা চকোলেট কাশির জন্য উপকারী। এসব ক্যান্ডি শক্ত কফ নরম করে গলা থেকে কফ বের করতে ও কাশি কমাতে পারে।

* গার্গল করা: গার্গল করলে কাশি ও গলা ব্যথা দুই-ই কমে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট ধরে গার্গল করুন। বিরতি দিয়ে দিয়ে কয়েকবার করুন। এটি কাশি কমাতে বেশ কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।

এছাড়াও কাশি হলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে চেষ্টা করুন গরম পানি পান করার। কাশি হলে গরম পানিতে গোসল করুন। এটা শরীর থেকে কাশির জীবাণুগুলোকে বের করে দেয়। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও যদি কাশি না কমে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ