দেড় মাসেও নতুন বই পায়নি শিক্ষার্থীরা

এনসিটিবি
এনসিটিবি  © টিডিসি ফটো

প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বছর শুরু হয় নতুন বইয়ের ঘ্রাণে। কিন্তু এবার সেটি হয়নি। বছরের প্রায় দেড় মাস পার হলেও এখনো শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছায়নি। এ নিয়ে হতাশা রয়েছে অভিভাবকদের মাঝে। তাদের অভিযোগ, নতুন বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়তে বসতে চাচ্ছে না। এদিকে এনসিটিবি বলছে, ছাপাখানা থেকে বই দিতে দেরি করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন: উপাচার্যদের দুর্নীতির বিচার হওয়া উচিত: ঢাবি উপাচার্য

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৩৪ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য ২ লাখ ৮ হাজার ২১২টি বই বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এনসিটিবির কাছ থেকে এই দুই উপজেলার বই ছাপানোর দায়িত্ব পেয়েছে বন্দরের নবীগঞ্জে অবস্থিত জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন। তারা বই ছাপানোর পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠালে সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত দুই মাসে ছাপাখানা থেকে পঞ্চম শ্রেণির বছরের শুরুতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ কোনো বই সরবরাহ করা হয়নি।

বন্দর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন বলেন, ছাপাখানায় বারবার যোগাযোগ করলেও বই সরবরাহ করেনি তারা। শিক্ষক অভিভাবকেরা বইয়ের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এনসিটিবির বাফার স্টক থেকে গত মঙ্গলবার দেড় হাজার সেট বই পাঠানো হয়েছে। সেগুলো আপাতত বিতরণ করা হবে।

বন্দরের কদম রসুল শিশুবাগ স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে ফাতেমা নতুন বই পায়নি। স্কুল থেকে পুরোনো বই দেওয়া হয়েছে। সেই বই দিয়েই পড়াশোনা করছে। নতুন বই দিবে স্কুল থেকে সেটাও জানায়নি ।

রাজশাহীতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই হাতে পায়নি। কোনো কোনো স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গণিত, পদার্থ কিংবা রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পায়নি। জানা গেছে, রাজশাহীতে সব মিলিয়ে বইয়ের প্রয়োজন ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৮৫টি। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৬২০টি বই পাওয়া গেছে। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বলে বলছেন অভিভাবকরা। 

রংপুর বিভাগেও একই চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, রংপুর বিভাগের কোনো জেলায়ই মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা সব বই পায়নি। 

আরও পড়ুন: এবার নাটকে অভিনয় করলেন ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম

শিক্ষার্থীদের বই না পাওয়ার বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার এমদাদুল হকে বলেন, ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আমার সন্তান। আজ ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ। এখন পর্যন্ত আমার সন্তান বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ধর্ম ও সমাজ বিজ্ঞান বোর্ড বই পায়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্লাস চলমান রেখেছে। বই বিহীন অনলাইন ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা শিখবে কিভাবে আমার জানা নাই? অপরদিকে বাংলা ও গণিতের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে আগামী সোমবার। আমার সন্তানের বই নাই। কিভাবে অ্যাসাইনমেন্ট সলভ করবে? আমি বাবা হয়ে সন্তানের মুখের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি। কি-ই-বা করার আছে আমার!

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলে-মাদরাসায় ছাত্রছাত্রীরা সব বই না পাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট ছাপাখানাগুলো থেকে ছাপা শেষে সব বই ছাড় করা হয়েছে। তবে, ছাত্রছাত্রীরা এখনো বই না পাওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০টি বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ৯ নভেম্বর। আর প্রাক প্রাথমিকের ৩৩ লাখ দুই হাজার ৭৪০টি বই ছাপাতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বই ছাপা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়া, দফায় দফায় টেন্ডার বাতিল, দেরিতে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে বই পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।