নিয়ম না মানায় গড়ে উঠছে না ভালো বিদ্যালয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:৩৪ PM , আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২, ০৮:২৮ PM
স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায় এ সংকট বেশি। বিভাগীয়-জেলা পর্যায়ের মাধ্যমিক শিক্ষায় এখনো নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার আগে গড়ে ওঠা জিলা স্কুলগুলো। এর জন্য অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা।
গত ৫০ বছরে দেশে কয়েক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার প্রায় সবই বেসরকারি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি তদারকি ও নজরদারির বেশ অভাব। অনেক প্রতিষ্ঠানই অর্থাভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন। অবকাঠামোগত দুর্বলতাতো রয়েছেই।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার খাতায় পৃষ্ঠাজুড়ে ‘ভালোবাসি তোমায়’
এছাড়া শিক্ষার ব্যয় বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীই মাধ্যমিকে এসে ঝরে পড়ছে। গত কয়েক বছরে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলেও মোটাদাগে দেশে সরকারি উদ্যোগে ভালোমানের মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। তাই স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত এখনো অনেকটাই দুর্বল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভালো বিদ্যালয় হয়নি বিষয়টি এমন না । দেশে কিছু মডেল বিদ্যালয় হয়েছে। মানসম্মত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
যখন কোন স্কুলের অনুমোদন দেয়া হয় তখন মডেল স্কুলের যে বৈশিষ্ট্য সে সব বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। অনুমোদনের সময় এসব নিয়ম অনুসরণ করেনা বলে মানসম্মত বিদ্যালয় তৈরী হচ্ছেনা। দেশে সরকারি স্কুলের পরিমাণ খুবই কম। বিভিন্ন কারণে বেসরকারি স্কুলগুলো এমপিওভুক্ত করা হয়না। তার মধ্য অন্যতম মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ভালো পরিবেশ।
ভালো শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্থানীয়দের প্রভাবে বিদ্যালয়গুলোতে মান সম্মত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আবার মান সম্মত শিক্ষক নিতে হলে ভালো বেতন দিতে হবে। পদোন্নতি দিতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে অধ্যাপক হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ একবার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলে তিনি আজীবন শিক্ষকেই থেকে যান । ভালো শিক্ষক তৈরীর জন্য প্রশিক্ষনের পাশাপাশি পদোন্নতির কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির (মোট দেশজ উত্পাদন) বিপরীতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয়ের পরিমাণ ১০ দশমিক ২ শতাংশ। যা প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তান থেকে কম। ভালো মানের বিদ্যালয় গড়ে তুলেতে হলে মাধ্যমিক শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অর্থের অভাবে অনেক বিদ্যালয় প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না।
আরও পড়ুন: রাজধানীর ফুসফুস খ্যাত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
দেশের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোয় প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব অনেকটাই প্রকট। ব্যানবেইসের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক রয়েছেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্য মাধ্যমিকের প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষক এখনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন, যা মোট শিক্ষকের ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
মানসম্মত বিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য কি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. হাফিজ বলেন, ভালো মানের বিদ্যালয় তৈরী করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় বিদ্যালয়ের অনুমতি না দিয়ে যাচাই করে অল্প সংখ্যক বিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে হবে। এক্ষেত্রে মডেল বিদ্যালেয়ের নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হবে। সরকারকে অনুমোদনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদারকি করতে হবে। অনুমোদনের সময় বিদ্যালয়ের পরিবেশ, অবকাঠামো, শিক্ষকের মান এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে কিনা সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটি বিশাল একটি ক্ষেত্র তাই সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। বেসরকারিভাবেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বড় বড় উদ্যোক্তা-শিল্পগোষ্ঠী যারা আছেন তাদেরকে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। তারা যদি এগিয়ে এসে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তাহলে মান সম্মত বিদ্যালয় তৈরী হবে।