‘টুয়েলভথ ফেইল’ সিনেমায় নিজেদের গল্প খুঁজে পাচ্ছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা 

  © সংগৃহীত

দুই মাস আগে ভারতে মুক্তি পেয়েছিলো বহুল আলোচিত সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেইল’। সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পড়েনি। তবে দিন যত গড়াচ্ছে তত আলোচনা দৃঢ় হচ্ছে এই সিনেমা নিয়ে। এর অন্যতম কারণ দর্শক মনে স্থান করে নিয়েছে এটি।

বলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘টুয়েলভথ ফেইল’। সিনেমাটিতে বলিউডের তেমন কোনো জনপ্রিয় সুপারস্টার না থাকায় এবং তেমন প্রচার প্রচারণাও না থাকায় শুরুতে মানুষের কাছে পৌঁছায়নি সিনেমাটি। এছাড়া ‘অ্যানিমেল’, ‘সালার’ ও ‘ডাঙ্কি’র মতো তুমুল আলোচিত সিনেমা এসেছে প্রেক্ষাগৃহে। তাই অনেক প্রেক্ষাগৃহে তেমনভাবে চালানো হয়নি এই সিনেমা। 

কিন্তু তারপরেও এর জনপ্রিয়তা আটকানো যায়নি। এখনও ভারতের প্রেক্ষাগৃহে চলছে ছবিটি। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তির পর থেকে মাত্র ২০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত ছবিটির বক্স অফিস কালেকশন ছাড়িয়েছে ৭০ কোটি রুপি। আর দর্শকের অসামান্য মুগ্ধতা তো রয়েছেই। যার প্রতিফলন দেখা গেছে আইএমডিবি রেটিংয়েও। ইন্টারন্যাশনাল মুভি ডাটাবেজে (আইএমডিবি) সিনেমাটির রেটিং ১০ এর মধ্যে ৯ দশমিক ২। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সিনেমাটি। 

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মূলত বাংলাদেশি দর্শকের নাগালে চলে এসেছে ‘টুয়েলভথ ফেইল’। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি নিয়ে রীতিমতো আলোচনার ঝড় বইছে। এর বিভিন্ন সংলাপ ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের দেয়ালে দেয়ালে। অনেকেই বলছেন, ২০২৩ সালের সেরা হিন্দি সিনেমা এটি। 

আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ কুমার শর্মাকে নিয়ে ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠকের উপন্যাস ‘টুয়েলভথ ফেল’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়া। সিনেমার গল্পে দেখা গেছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের এলাকা চাম্বালে জন্ম মনোজের। যেখানে অনিয়ম আর দুর্নীতিই শেষ কথা। এমনকি স্কুলগুলোতে পর্যন্ত প্রকাশ্যে চলে অনিয়ম। পরীক্ষার হলে শিক্ষক নিজেই বোর্ডে উত্তর লিখে শিক্ষার্থীদের পাস করান। এরকম এক অঞ্চলে প্রচণ্ড সততা নিয়ে বাঁচে মনোজের বাবা। আর সে কারণে সামান্য ক্লার্কের চাকরিও হারায়।

আরও পড়ুন: রাজউকের ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ পেলেন অভিনেতা শুভ

সংসারের ঘানি টানতে বড় ভাইয়ের সঙ্গে জুগাড়ে (যাত্রী পরিবহণের স্থানীয় এক বাহন) যোগ দেয় মনোজ। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনিয়ম। ঘটনাক্রমে এক সৎ পুলিশ অফিসারের দেখা পায় মনোজ। যাকে দেখে সৎ উপায়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে ১২ শ্রেণিতে ফেল করা মনোজ। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে তো সেটা সম্ভব নয়। তাই অদম্য জেদ নিয়ে ছুটে যায় শহরে। যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে অকল্পনীয় সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম পেরিয়ে কীভাবে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয়, তা-ই উঠে এসেছে ‘টুয়েলভথ ফেইল’-এ।  

এই গল্প নিছক গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। আর উপমহাদেশের অধিকাংশ যুবকের জীবনের সঙ্গেই এর কিছুটা মিল রয়েছে। এর পাশাপাশি ছবির অভিনয়শিল্পীরা যার যার জায়গায় অনবদ্য কাজ করেছেন। যার ফলে দর্শকের হৃদয় ছুঁতে পারছে ছবিটি।

সাবলীল গল্পের সিনেমাটি মূলত ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তির পর ভারতের বাইরের দর্শকের নজরে এসেছে। গল্পটা ভারতের দর্শকের চিরচেনা। ভারতের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কৃষক, অটোচালক কিংবা দিনমজুরের সন্তানেরা জীবনের পরিবর্তনের জন্য দিন পর দিন সংগ্রাম করে যান। বিশেষ করে ছবিটি সব থেকে বেশি মন কেড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। অতি সাধারণ গ্রাম থেকে উঠে আসা অনেক শিক্ষার্থী তাদের দীর্ঘ শিক্ষা জীবনের সংগ্রামকে খুঁজে পাচ্ছেন এই সিনেমাটিতে। 

মনোজের কঠিন জীবনসংগ্রাম চালিয়ে আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার গল্পে নির্মিত ছবিটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে হওয়ায় আরও বেশি দাগ কেটেছে অনেক দর্শকের মনে। সিনেমায় মনোজের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি। সেই সাথে মনোজের দীর্ঘ সংগ্রামে পাশে থাকা তার জীবন সঙ্গী আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশির চরিত্রটিও ছিলো অনেক দর্শকপ্রিয়। এই চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী মেধা শংকর। এছাড়াও অভিনয় করেছেন অনন্ত ভি জোশি, অংশুমান পুশকার প্রমুখ।

অনেকে বলছেন মনোজ চরিত্রে নিজের ক্যারিয়ারসেরা অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। বিক্রান্তকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অভিষেক বচ্চনসহ বলিউডের নামকরা সব নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীরা। এক গোলটেবিল আলোচনায় অভিষেক বচ্চন বলেছেন, হৃদয় দিয়ে সিনেমায় কাজ করে উদাহরণ তৈরি করেছেন বিক্রান্ত। 


সর্বশেষ সংবাদ