জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের টাকায় বাড়ি করতে চায় ফারজিনা

ফারজিনা আক্তার
ফারজিনা আক্তার  © সংগৃহীত

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মহড়া অনুষ্ঠানের পেছনের সারিতে জড়সড় হয়ে বসেছিল আট বছর বয়সী এক শিশু। তার পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল, গায়ে পুরোনো জামা। নাম ফারজিনা আক্তার। মা-বাবার সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে ঢাকায় আসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রটির জন্য শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছে ফারজিনা। সিনেমাটির শুটিংকালে তার বয়স ছিল চার বছর। খুব একটা কথা বলতে চায় না ফারজিনা। পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে শুনে শুধু তাকিয়ে থাকে। কখনো ছোট করে হাসে। তাতে বোঝা যায় সে খুশি। কিন্তু লজ্জায় কথা বলে না।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানের পোশাক নিয়ে নানা রকম প্রস্তুতি থাকে অতিথিদের। তবে ফারজিনার বাবা গ্রামের বাজার থেকে সামান্য দামে কাপড় কিনে একটি জামা বানিয়ে দিয়েছেন। সেটি পরেই পুরস্কার নেয় এ শিশুশিল্পী।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটির যখন শুটিং হয়, তখন ফারজিনার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। কীভাবে অভিনয় করতে হবে, সেগুলো বলে দিলে সেভাবেই অভিনয় করত। কিন্তু রাজি করাতে বেগ পেতে হয়েছে। শুটিংয়ে অনেক মানুষ থাকে, তাদের সামনে অভিনয় করতে লজ্জা পেত।

পুরস্কারের নেওয়ার বিষয়ে ফারজিনা বলে, ‘পুরস্কার নিতেই তো ঢাকাত আইছি। আমাদের টাকাও দেবে। সেই টাকা দিয়ে বাড়ি বানাব। আমাদের কোনো বাড়ি নেই।’

বাড়ি না থাকার বিষয়ে ফারজিনার বাবা বলেন, ‘আমাদের বাড়ি বিক্রি করে দিছি। আমাদের চাচাতো ভাইয়েরা কিনছে। অহন আমরা ওর নানিবাড়ি থাকি। এত বড় পুরস্কার পাচ্ছে। এটা নিয়ে কোথায় রাখব সেই জায়গাটা নাই। আমাকে যখন কায়াম স্যার (মুহাম্মদ কাইউম) পুরস্কারের কথা বলতে ফোন দিয়েছিলেন, তখন জানায় ছিলেন, এই পুরস্কারের সঙ্গে টাকা পাব। মেয়ে সেটা শুনেছে। এরপর থেকে বলছে, “বাবা, আমরা যে টাকা পাব, সেই টাকা দিয়ে বাড়ি করব।” আমার ইচ্ছা আছে বাড়ি করার। মেয়েটা এবার ওয়ানে পড়ে। কিন্তু বাড়িঘর না থাকায় ঠিকমতো স্কুলে যায় না। তাঁর খুব আশা নিজের বাড়িতে থাকা। এটা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়।’ 

টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় শুটিং লোকেশন দেখতে যান পরিচালক মুহাম্মদ কাইউম। সেখানে একটা বাড়ি শুটিংয়ের জন্য পছন্দ করেন। সেই বাড়িটি ফারজিনাদের। তখন ছোট এই মেয়েকে দেখে পরিচালকের শিশু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পছন্দ হয়।

শিশুটি শুরুতে রাজি না হলেও পরে সে সবাইকে চমকে দিয়ে দারুণ অভিনয় করে। মুগ্ধ হন সিনেমার পরিচালক মুহাম্মদ কাইউম। তিনি বলেন, ‘এই শিশুদের বাড়িতেই আমরা শুটিং করেছি। অভাবে সেই বাড়িটি তারা বিক্রি করেছে। তারা এখন নানাবাড়ি থাকে। পুরস্কারের টাকা দিয়ে তারা বাড়ি করবে। আমি মন থেকে চেয়েছিলাম সে পুরস্কার পাক। তাহলে কিছু টাকা পাবে। এতে হয়তো তাদের কোনো রকম একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।’

পুরস্কার হিসেবে তিনি পদক ছাড়াও পায় এক লাখ টাকা। গত ৩১ অক্টোবর ঘোষিত হয়েছে ২০২২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২৭ বিভাগে শিল্পী, কলাকুশলী, প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৪ নভেম্বর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ