‘উন্নয়ন ফি’ নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে যবিপ্রবি প্রশাসন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি)
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি)   © টিডিসি ফটো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উন্নয়নের নামে অস্বাভাবিক ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বছর যবিপ্রবিতে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৬টি বিভাগে মোট ৯৩০টি আসনের বিপরীতে ৫২ হাজার ৬৪০ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছেন। তাদের প্রত্যেককে গুণতে হয়েছে মাথাপিছু ৬৫০ টাকা।

এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে ৩ কোটি ৪২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়নের নামে ও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ নিচ্ছে ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা। এতে করে মোট ৯৩০টি আসনে জমা হবে আরও ১ কোটি ৬৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।

আরও পড়ুন: অনার্স শেষে এমআইটিতে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন বুয়েটের ৩ শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইটি পৃথক খাতে সর্বমোট ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে । এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৫০০ টাকা, বেতন (১ম সেমিস্টার) ৯০০ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি ৬০০ টাকা, বার্ষিকী ফি ১৫০ টাকা, খেলাধুলা ফি ২০০ টাকা, চিকিৎসা ফি ২০০ টাকা , পরিবহন ফি ৭০০ টাকা, সিলেবাস ফি ২০০ টাকা, বিদ্যুৎ ফি ২০০ টাকা, ধর্মীয় ফি ৫০ টাকা, এ্যাস্টাবলিশমেন্ট ফি ১০০ টাকা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফি ৩০০ টাকা , জামানত ১০০০ টাকা, ক্লাব ও সোশ্যাল এক্টিভিটিজ ২০০ টাকা , জরুরী সাহায্য ৫০ টাকা, তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ সেবা ৬০০ টাকা, একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাবদ ৩০০ টাকা। এছাড়াও ব্যবহারিক এবং কোর্স ফি ১৫০০ টাকা, গ্রেডশীট ও মার্কসীট ভেরিফিকেশন ফি ৫০০ টাকা, ল্যাবরেটরী উন্নয়ন ফি ৪০০০ টাকা, লাইব্রেরী ফি ১৫০০ টাকা, ছাত্র কল্যাণ ফি ৫০ টাকা। অনুষদ উন্নয়ন ফি ২০০০ টাকা, হল সংযুক্তি ফি ৭৫০ টাকা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি ১০০ টাকা।

যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফি, বেতন (১ম সেমিস্টার) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে মোট ৩ হাজার টাকা নিচ্ছে সেখানে আবার ব্যবহারিক এবং কোর্স ফি এর নামে ১৫০০ টাকা গুণতে হচ্ছে। ব্যবহারিক এবং কোর্স ফি এর জন্য ১৫শ টাকা নিয়েও আবার ল্যাবরেটরী উন্নয়নের জন্য হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। যেটা কোন ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয় এবং পরস্পর সাংঘর্ষিক। এরপরেও অনুষদ উন্নয়নের নামেও নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা যা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। গ্রেডশীট ও মার্কসীট ভেরিফিকেশনের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা ,যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে ভেরিফিকেশন করা সম্ভব।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা কিন্তু যার মূল্য তালিকায় লেখা আছে ২০০ টাকা। বাকি ১০০ টাকা কোথায় যাচ্ছে? যার সদুত্তর কেউ দিতে পারেন নি। পাশাপাশি সিলেবাসের জন্য ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অন্যায্য। প্রতি বিভাগের সিলেবাস শিক্ষার্থীদের বিভাগ থেকে সফটকপি দিয়ে দেওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীরা সেটা প্রিন্ট করে নেয়। তাছাড়াও এ্যাস্টাবলিশমেন্ট ফি, ক্লাব ও সোশ্যাল এক্টিভিটিজ, জরুরী সাহায্য, ছাত্র কল্যাণ ফি নামে আলাদা ভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এইভাবে একই রকম ভিন্ন খাত দেখিয়ে পকেট কাটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেমন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফি ৩০০ টাকা নেওয়ার পরেও ক্লাব ও সোশ্যাল এক্টিভিটিজ এর জন্য ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম করে থাকে। যেখানে ছাত্র কল্যাণ ফি নেওয়া হচ্ছে সেখানে জরুরি ফি থাকাটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।

আরও পড়ুন: ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন আজ

এই বিষয়ে প্রথম বর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাত্র ইউনিটে আবেদন করে একবার টাকা দিয়েই হয়ে গেছে ; যেমন হাবিপ্রবিতে একটি ইউনিট করেই আবেদন করতে হচ্ছে কিন্তু যবিপ্রবিতে বিজ্ঞানের ৪ টি অনুষদে আলাদা আলাদা আবেদন করতে হয়েছে। এছাড়াও ভর্তি ফি তেও কিছু জায়গায় আমার কাছে অসংগতি আছে বলে মনে হচ্ছে। এমনিতেই স্কুল কলেজের বিভিন্ন ফি দিতে দিতে আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবার ক্লান্ত। একটা সন্তানকে এই পর্যন্ত আনতেই আমাদের অনেক অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। শেষমেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে এসে মনে হচ্ছিল যে, এবারই হয়তো এই ফি এর বোঝা শেষ কিন্তু এখানেও রয়েছে নানা সমস্যা।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ফি সম্পর্কিত সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার  প্রকৌশলী  মো.  আহসান  হাবীব এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ