নোবিপ্রবিতে ফিসারিজের নিয়োগে প্রাণিবিদ্যার গ্রেজুয়েট আহবান
- আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১, ০১:৫০ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১, ০২:০৯ PM
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত বিভাগের পাশাপাশি প্রাণিবিদ্যার গ্রেজুয়েটদের আহবান করা হয়েছে। প্রাণিবিদ্যাকে ফিসারিজের সমমান দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উক্ত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে নোবিপ্রবি ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের শূন্য পদে নিয়োগের আহবান করা হয়। এতে প্রভাষক পদে নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যাকে ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সমমান দেওয়া হয়।
এর আগে ২৬ জুন ২০২১ এ প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদে নিয়োগ যোগ্যতায় শুধুমাত্র ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিষয়ের উপর ডিগ্রি প্রদানকারীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করে প্রাণিবিদ্যাকে একই যোগ্যতার সমমান দেওয়ায় এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক পদে আবেদনের যোগ্যতায় সমমান দেওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি প্রাণিবিদ্যা থেকে ফিসারিজের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এমনকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ গ্রাজুয়েট বাদ দিয়ে নোবিপ্রবির ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের থেকে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ১৫-১৬ বছর ধরে এই ফিসারিজ বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে অনেক গ্রাজুয়েট তৈরি হয়েছে যারা এই বিভাগের শিক্ষক হবার যোগ্যতা রাখে।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বিভাগটির ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে ৪ টি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ফিশারিজ এন্ড মেরিন সাইয়েন্স বিভাগ তার একটি। এই বিভাগ থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে বের হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ থেকে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। কেউ যদি কোন বিশেষ সুবিধার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নিজেদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি এই ধরণের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিৎ।
বিষয়টি নিয়ে বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স এর সমমান দেওয়া কোনোভাবে উচিত নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগ রয়েছে। ফিসারিজ বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্বেও ফিসারিজ বিভাগে প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আহবান করা কাম্য নয়।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪ নং ধারার, ৬ ও ৯ নং উপধারায় উল্লেখ আছে, বিভাগের নীতি নির্ধারণ বিষয়াদি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি এবং বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির আওতাভূক্ত থাকিবে। প্ল্যানিং কমিটি নিম্নবর্ণিত কার্যাবলী সম্পাদন করিবে, যথা-
(ক) বিভাগের সম্প্রসারণ ; এবং
(খ) শিক্ষক, অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্লানিং কমিটির কোনো বৈঠক ছাড়াই কমিটির কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়েছে। প্ল্যানিং কমিটির কাজ কিভাবে সম্পাদন হয়েছে জানেন না উক্ত কমিটির সদস্যরাও।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দেশের বাহিরে থাকায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর সরকারের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজী নন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা বিভাগটির সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী মাহমুদুল হাসান।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জাহাঙ্গীর সরকার প্ল্যানিং কমিটির বৈঠক মতামত নিয়েছেন এবং পুনরায় রিপোর্ট তৈরি করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলাম। তাই এই মুহূর্তে এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবে।
পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা জসিম উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এটি অপশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে কেউ চাইলে আবদেন করতে পারবে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই এটি তৈরী করা হয়েছে ।
নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়গুলো বিভাগের চাহিদার উপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত করা হয়। নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সংযুক্ত করা না করার বিষয়ে বিভাগীয় প্লানিং কমিটি থেকে যদি কোনো সংশোধন আসে তাহলে সেভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ বিভাগে কেনো প্রাণিবিদ্যার বিষয়টি সংযুক্ত করা হলো আমার জানা নেই। তবে বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিভাগ যদি নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সরিয়ে শুধু ফিসারিজ বিষয়টি রাখার জন্য প্ল্যানিং কমিটির বৈঠক অনুযায়ী রিপোর্ট জমা দেয় তাহলে সেটিই বিবেচনা করা হবে ।