মাভাবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার সংকট, স্টাফদের দুর্ব্যবহার
- মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২১ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২১ PM

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল সেন্টারে নানা অবহেলা ও ডাক্তার সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য নেই কোনো সাইকোলজিস্টও। চিকিৎসা সেবার সময়সূচি ও ডাক্তার সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মেডিকেল সেন্টারের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। তবে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর ২টার পর কিংবা অন্য দিন সন্ধ্যার পর কোনো সেবা পাওয়া যায় না। ফলে সন্ধ্যার পর অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
মেডিকেল সেন্টারে মোট ৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৪ জন কর্মরত আছেন। ১ জন চিকিৎসক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন, আর ২ জন শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পার্টটাইম দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে অন্যত্র চলে যান তিনি। ফলে এই তিনজনের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মাত্র ৪ জন ডাক্তার অত্যন্ত অপ্রতুল।
শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সরেজমিনে মাভাবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টারে গেলে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ১৩ জন স্টাফের মধ্যে ছুটির দিন ব্যতীত ২২ কার্যদিবসে কারো অনুপস্থিতি ১৬ দিন, কারো ১৫ দিন, কারো ৯ দিন, কারো ১০ দিন।
হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে সেকশন অফিসের স্টাফরা জানান, এটি ভারপ্রাপ্ত অফিসার প্রধানের রুমে রয়েছে। তবে পরবর্তীতে দেখা যায়, অফিসার প্রধান সেই খাতা সেকশন অফিস থেকেই সংগ্রহ করেন। এই মধ্যবর্তী সময়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর সংযোজন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় উল্লেখ নেই।
অফিসের নিয়ম অনুযায়ী, দুই শিফটে (সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত) কাজ করার কথা থাকলেও স্টাফদের মধ্যে দেরিতে আসা, দীর্ঘ সময় লাঞ্চে থাকা ও আগেভাগে চলে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, কিছু মহিলা স্টাফ অমার্জিত ভাষায় কথা বলেন এবং মোবাইলে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি একদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। ওষুধ নেওয়ার সময় এক মহিলা স্টাফ বিরক্ত হয়ে বললেন, “এমন সময়ে কেন এসেছেন? আগে কেন আসেননি? এখন তো চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।” আমি বললাম, “মেডিকেল সেন্টার কি রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে না?” তখন উনি উল্টো আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিনা, কোন ইয়ারে পড়ি। ওষুধ নিয়ে বের হওয়ার সময় শুনলাম, তিনি আরেকজনের সঙ্গে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলছেন, “মনে হয় ফার্স্ট ইয়ার, কোথা থেকে যে আসে ওরা!”
স্টাফদের অনুপস্থিতি ও নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অফিসার প্রধান ডা. আহাম্মদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) আমাদের মাসিক সভা আছে, সেখানে সকল অভিযোগ তুলে ধরবো। আর খুব শীঘ্রই নতুন ডাক্তার আসবে।’
শিক্ষার্থীরা দ্রুত ডাক্তার সংকট নিরসন, স্টাফদের অনিয়ম বন্ধ করা এবং ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
ডাক্তার সংকটের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুজন পার্ট-টাইম ডাক্তার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যারা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবেন।’
সাইকোলজিস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সাইকোলজিস্ট নেই, এটি আমাদের নজরে আছে। আমাদের এখানে সাইকোলজিস্টের কোনো পদ নেই। এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (UGC) জানাবো। এছাড়া এখানে সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট নাই, ডিপার্টমেন্ট থাকলে সহজে দেওয়া যায়। আমাদের এখানে শুধুমাত্র সাইকোলজিস্ট না একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তারও দরকার। এই বিষয়েও আমি কথা বলবো।’
আজীম আখন্দ বলেন, ‘এখন মানুষ হতাশ হয়ে যায় দ্রুত, হতাশ হওয়া থেকে বাঁচাতে হয়। তারা যেন হতাশ না হয়ে পড়ে কোন ভাবেই। আজকাল স্কুল-কলেজে সাইকোলজিস্ট থাকলেও, আমাদের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, যা সত্যিই চিন্তার বিষয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করবো, যাতে একটি সাইকোলজিস্ট পদের অনুমোদন পাওয়া যায়।’