এখনও স্বপ্নে বিভীষিকাময় পরীক্ষা দিচ্ছেন! বাচাঁর উপায় জানুন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৪, ০৬:৪২ PM , আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪, ০৬:৪২ PM
অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই বড় এক বিভীষিকা হল পরীক্ষা। অনেকে যেমন রাত জেগে পড়াশোনা করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, ঠিক তেমনই টেনশনে অনেকের স্বপ্নেও পরীক্ষার হল চলে আসে। অনেক শিক্ষার্থী স্বপ্নে নিজেকে দেখেন তিনি পরীক্ষার হলে। আর তার সামনে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। হয়ত যে বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, স্বপ্নে ভিন্ন কোনো সাবজেক্টের প্রশ্ন। ধরুন আপনি প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিসংখ্যান ও মেকানিক্স বিষয়ে কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখেন গণিতের প্রশ্ন। আর প্রশ্নপত্রে সব এমন প্রশ্ন, যা জীবনেও আপনি দেখেননি। এর পরপরই মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে বুঝতে পারলেন, এটা স্বপ্ন ছিল। তখন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
পরীক্ষা নিয়ে স্বপ্ন দেখার বিষয়টি এমন যে এটি প্রকৃতপক্ষে যেকোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এমনকি কোন বিষয়ে স্বপ্ন দেখবেন সেটি জানার কোনো উপায় নেই। কারণ, মানুষ সাধারণত বেশিরভাগ স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না। কিন্তু এ ধরনের স্বপ্ন কেন আসে? এটি থামানোর কোনো উপায় আছে কি?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তার ঘুমের পুরো সময়ের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ, ৯০ থেকে ১২০ মিনিট সময়ে এই র্যাপিড আই মুভমেন্ট হয়ে থাকে। ঘুমের যে সময়টায় আপনার র্যাপিড আই মুভমেন্ট চলে অর্থাৎ স্বপ্ন দেখেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের একটি অংশ শরীরকে কিছুটা অসাড় করে দেয়, যাতে স্বপ্নে আপনার নড়াচড়াগুলো প্রকৃত শরীরের ওপর কোনো প্রভাব না ফেলে।
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কলিন এস্পি বলছেন, মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার সময়ও তার মস্তিষ্ক জেগে থাকে। আর সেটি ব্যস্ত থাকে মানুষ কি শিখেছে, তা স্মৃতিতে ধরে রাখতে ও এর আবেগ প্রক্রিয়াকরণে। তবে এর থেকে যে ‘আউটপুট’ তৈরি হয়, তাকে আমরা স্বপ্ন হিসেবে চিনি। আমাদের মস্তিষ্কে যে-সব উপাদান কাজ করছে, তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলোই আমাদের স্বপ্নে আসে।
ঘুমন্ত অবস্থায় চোখের মণি নড়াচড়া করা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, যাকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম)। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তার ঘুমের পুরো সময়ের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ, ৯০ থেকে ১২০ মিনিট সময়ে এই র্যাপিড আই মুভমেন্ট হয়ে থাকে। ঘুমের যে সময়টায় আপনার র্যাপিড আই মুভমেন্ট চলে অর্থাৎ স্বপ্ন দেখেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের একটি অংশ শরীরকে কিছুটা অসাড় করে দেয়, যাতে স্বপ্নে আপনার নড়াচড়াগুলো প্রকৃত শরীরের ওপর কোনো প্রভাব না ফেলে। অর্থাৎ স্বপ্নে আপনি এক জায়গা থেকে হেঁটে আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছেন খুব সহজেই, কিন্তু আপনার দেহ বিছানায় যেভাবে শুয়ে ছিলেন সেভাবেই আছে, এটা সম্ভব হচ্ছে কেবল মস্তিষ্কের ওই অংশের মাধ্যমে, যা আপনার দেহকে অসাড় করে রাখে। কিন্তু এটা ততক্ষণ পর্যন্তই চলে, যতক্ষণ আপনার মস্তিষ্কের সে অংশটি জেগে থাকে। আর যখন সে অংশটিও আপনার সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই আপনি স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিছানা থেকে পড়ে যান।
আমরা কেন স্বপ্ন দেখি–এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
১. আমাদের অবচেতনের ভাবনাচিন্তা, ভয় বা ইচ্ছার প্রতিফলন হলো এই স্বপ্ন।
২. প্রত্যেক স্বপ্নের মধ্যেই কোনো না কোনো অর্থ লুকিয়ে রয়েছে।
৩. মানুষ অ্যাংজাইটি বা ভালোলাগা থেকেও স্বপ্ন দেখতে পারে।
৪. মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সব স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না।
পরীক্ষার বিষয়টিই স্বপ্নে আসে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক এস্পি বলেন, স্বপ্নে হুমকিস্বরূপ কিছু দেখা খুবই সাধারণ বিষয়। তিনি আরও যোগ করেন, কোনও কিছু হুমকিস্বরূপ হওয়ার মানে সেটি খারাপ, বিষয়টি এমন নয়। তবে এর মানে দাঁড়াতে পারে, এটি চ্যালেঞ্জিং কিছু একটা। আর সংজ্ঞানুসারেই পরীক্ষা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
সাইকো-অ্যানালিসিস বা মনোসমীক্ষণের জনক সিগমন্ড ফ্রয়েড বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের অবচেতন মনই আসলে কথা বলে আমাদের সঙ্গে। ফ্রয়েডের ধারণা, আমাদের স্বাভাবিক জীবনে যে-সব আকাঙ্ক্ষা, তাড়না, অনুভূতি, চিন্তা আমরা প্রকাশ করতে পারি না, ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে সেসব প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন হলো, মানুষের জীবনে তো অনেক কিছুই ঘটে থাকে। তাহলে, পরীক্ষার বিষয়টিই স্বপ্নে আসে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক এস্পি বলেন, স্বপ্নে হুমকিস্বরূপ কিছু দেখা খুবই সাধারণ বিষয়। তিনি আরও যোগ করেন, কোনও কিছু হুমকিস্বরূপ হওয়ার মানে সেটি খারাপ, বিষয়টি এমন নয়। তবে এর মানে দাঁড়াতে পারে, এটি চ্যালেঞ্জিং কিছু একটা। আর সংজ্ঞানুসারেই পরীক্ষা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
পরীক্ষা নিয়ে এ ধরনের ভীতিকর স্বপ্ন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে করণীয় কী?
প্রথমত, আসলেই যদি কারও সামনে পরীক্ষা থাকে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, পড়াশোনার ভালো একটি রুটিন রাখা, যেখানে ‘নিজেকে আশ্বস্ত করার জন্য’ নিয়মিত বিরতিও থাকবে। এতে করে তার একটি পরিকল্পনা থাকবে, আর তিনি সেটাকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবেন। আর মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে পড়াশোনা নিয়ে চিন্তার বিষয়টিও এড়িয়ে যেতে হবে।
আরেকটি দিক হলো, আপনি যদি মাথায় অঙ্কের বিভিন্ন সমীকরণ নিয়ে বিছানায় যান, তবে সেটা মধ্যরাতেও আপনার মাথায় ঘোরার ঝুঁকি থাকে। তাই নিজেকে সারিয়ে তোলার সময় দেয়া উচিত। এমনকি নিজের ব্যাপারে ‘সহানুভূতিশীল’ হওয়ার বিষয়টিও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে, যখন কেউ বাজে স্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছেন। সাধারণভাবে বললে দুশ্চিন্তা রাতেই হোক বা দিনে এটি একই রূপে এসে থাকে।