ভারতে পরিষেবা বন্ধের দাবি হোয়াটসঅ্যাপের

ভারতে পরিষেবা বন্ধের দাবি হোয়াটসঅ্যাপের
ভারতে পরিষেবা বন্ধের দাবি হোয়াটসঅ্যাপের  © সংগৃহীত

হোয়াটসঅ্যাপ হচ্ছে তথ্য আদান-প্রদানের অন্যতম সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলছে। তবে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ এবার ভারত ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। ভারতে এই ফিচার প্রত্যাহারের চেষ্টার মুখে হোয়াটসঅ্যাপের কার্যক্রম বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে মেটা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি মেটার মালিকানাধীন জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটি দিল্লি হাইকোর্টকে বলেছে, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচার ভাঙতে বাধ্য করা হলে তারা ভারত ছেড়ে যাবে। দিল্লি হাইকোর্টে সেই আপিলের শুনানিতে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) মেটার আইনজীবী তেজস কারিয়াকে এই হুঁশিয়ারি দেন। এনক্রিপশন ভাঙার বিষয়ে আদালতে কোম্পানির মতামত তুলে ধরে এই বিষয়ে আইন মেনে চলার পরিবর্তে দেশ ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। 

হোয়াটসঅ্যাপ বলছে তাদেরকে যদি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ভাঙতে বলা হয় তাহলে ভারতে পরিষেবা বন্ধ করতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এনক্রিপশন ইউজারদের প্রাইভেসি নিশ্চিত করে। তাই এই সুবিধা বন্ধ করা যাবে না। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে হোয়াটসঅ্যাপে সবথেকে বেশি ইউজার রয়েছে ভারতে। ৯০ কোটির বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার রয়েছে ভারতে। সুতরাং, ওই দেশে যদি অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিরাট বড় সিদ্ধান্ত হবে।

ভারতে অ্যাপটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাক তা মেটা ও হোয়াটসঅ্যাপ কখনোই চায় না। ২০২১ সালের ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য অ্যাপগুলোকে ব্যবহারকারীদের মেসেজ শনাক্ত করতে দিতে হবে। এন্ড-টু-এন্ড-এনক্রিপশনের ফলে ভারত সরকার এই মেসেজগুলো দেখতে পারে না। এমনকি এসব মেসেজ ও কনটেন্ট হোয়াটসঅ্যাপ নিজেও দেখতে পারে না। এখন মেটা এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করছে। মেটা বলছে, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এই আইন ভারতের নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে। 

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি নতুন আইটি আইন আনা হয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টে একটি সেই আইনের অধীন এক রায়ে চ্যালেঞ্জ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ তথা মেটা। কোম্পানির হয়ে তেজস করিয়া আদালতে জানান, আমাদের যদি এনক্রিপশন ভাঙতে বলা হয় তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করতে হবে। মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে শুধুমাত্র তার গোপনীয়তা নীতির জন্য। যা কোম্পানির সরবরাহ করে।

ভারতের সরকার বলছে, অনলাইন সুরক্ষা ও ক্ষতিকর কনটেন্টকে বাঁধা দিতে মূল ব্যক্তিকে শনাক্ত করা জরুরি। যারা সমাজে ভুয়া তথ্য ও হিংসা ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপগুলোর দায়িত্ব। 

এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সুবিধা কী?
এটি একটি প্রাইভেসি ফিচার যা অনেক বছর ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে থাকে। এটির সুবিধা হল প্রেরক বা সেন্ডার যা পাঠাচ্ছেন তিনি এবং যিনি রিসিভ করছেন বা প্রাপক তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না। সে মেসেজ হোক বা ছবি। হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসিতেও এই ফিচারের উল্লেখ করা হয়েছে।

কী কারণে হোয়াটসঅ্যাপের এমন জানিয়েছে?
ভারত সরকারের নতুন আইটি নিয়মে হোয়াটসঅ্যাপকে চ্যাটগুলো ট্রেস করতে এবং বার্তাগুলি যারা পাঠিয়েছেন তাদের শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, এটি তাদের প্রাইভেসি পলিসি বা এনক্রিপশন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের অধীনে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা নীতি লঙ্ঘন করে। তাই তারা এই এনক্রিপশন ভাঙতে পারবে না।

দিল্লি হাইকোর্টে এনক্রিপশন ভাঙা যাবে না বলে জানিয়েছে মেটা। যদিও তার পাল্টা যুক্তি দিয়েছে সরকারও। আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কিছু ঘোষণা করেনি কোম্পানি। তাছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে সবথেকে বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে ভারতীয়। তাই দেশে হোয়াটসঅ্যাপ যে সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অন্যান্য দেশেও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। তবে এনক্রিপশন বিষয়ক নিজেদের নীতি মেনে চলতে হোয়াটসঅ্যাপ অটল। কারণ, ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার আকর্ষণেই হোয়াটসঅ্যাপের এত জনপ্রিয়তা। এ জন্যই এক দশক আগে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয় মেটা।

 

সর্বশেষ সংবাদ