৪৭ বছরেও হলো না ঢাবির শহীদ মিনার, হবেও না!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে স্থাপিত শহীদ মিনারের নাম ফলক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে স্থাপিত শহীদ মিনারের নাম ফলক

বাংলাদেশে নাম ফলকে আটকে থাকা স্থাপনার সংখ্যা কম নয়। এমপি, মন্ত্রী কিংবা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নামে উদ্বোধন করা সড়ক-মহাসড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট কিংবা অভারপাস- সবকিছুই রয়েছে এই তালিকায়। কিন্তু সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও যে এই সারিতে থাকতে পারে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রশাসন এসেছে, প্রশাসন বদলেছে; কমিটি হয়েছে, পরিকল্পনাও এঁটেছে। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এ প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার।

পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে স্থাপন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর। বঙ্গবন্ধুর শাসনামল ১৯৭২ সালে এর ভিত্তি স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু ৪৭ বছর কেটে গেলেও নির্মাণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি এ স্থাপনাটির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা স্থাপনাটি সম্পর্কে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. আয়শা বেগমের লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: স্মৃতি নিদর্শন’ নামক গ্রন্থে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আয়শা বেগম ‘দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’কে বলেন, আমি যখন এ বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করি; তখন প্রশাসনিক লোকজনের কাছে বিষয়টি নিয়ে কোন তথ্যই ছিল না। বলা যায়, তারা এটা সম্পর্কে জানতোই না। ভিত্তি প্রস্তরের নাম ফলকে এটা নিয়ে কিছু কথা লেখা আছে। দীর্ঘদিন কাজ না হওয়ায় এগুলো পড়ার উপায়ও ছিল না। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে এটা নিয়ে আর কোন কাজই হয়নি। যখন শহীদ দিবস আসে; তখন এ নিয়ে শুরু হয়। পরবর্তীতে আর খোঁজ থাকে না।

২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শহীদ মিনারের পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এত বছর পরও যেহেতু শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি, তাই ওই স্থানে আমাদের পরিকল্পনা মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে অবদান; তা নিয়ে একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ’ তৈরি করা। যেহেতু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে; সেহেতু নতুন করে শহীদ মিনার নির্মার্ণের প্রয়োজন মনে করছি না।’

জানা যায়, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের আমলে ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। যাতে বলা হয়, ২০ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের ইচ্ছানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া হবে।

ওই চিঠি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। যে কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি সভা করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ‘স্থান নির্বাচন’ কমিটি গঠন করে। ওই বছরের ২৮ মার্চ ‘স্থান নির্বাচন’ কমিটি সভা করে সুপারিশ দেয়। সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এলাকায় যেখানে ১৯৭২ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ শহীদ মিনারের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন; সেখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা যেতে পারে। পরে ৩১ মার্চ সুপারিশটি সিন্ডিকেট অনুমোদন দেয়। সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে ২৩ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়।

পরে স্মৃতিস্তম্ভের নকশার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নকশা করার জন্য ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৫ জানুয়ারি সেখান থেকে একটি নকশা ঠিক করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা। এরপর ৩০ জানুয়ারি কেমন খরচ পড়বে এই বিষয় জানতে চিঠি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যলয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এতসব পদক্ষেপের পর প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। মল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন ও অবহেলায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক প্রায় মুছেই গেছে। পাশেই শহীদ মিনারের অংশবিশেষও অবহেলায় পড়ে আছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম আফজালুল হক বলেন, ‘মল চত্বরে শহীদ মিনারের পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের নকশাও আমাদের হাতে এসে পৌছেছে।’ এ বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে (প্রশাসন) মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence