হলিক্রস ছাত্রীর মৃত্যু

শিক্ষার্থীদের প্রাইভেটের জন্য বাধ্য করতে প্রশ্ন কঠিন করতেন শিক্ষক

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা
হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা  © সংগৃহীত

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহা মৃত্যু ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র তৈরী করেন শোভন রোজারিও। তিনি শিক্ষার্থীরা যেন ফলাফল খারাপ করে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় সে কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন করে তৈরি করতেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ডিআইএর ঢাকা বিভাগীয় শাখার উপ-পরিচালক ড. রেহানা খাতুনকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হলেন শিক্ষা পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন।

জানা যায়, অসুস্থতা নিয়ে দ্বিতীয় সাময়িকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলো। অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফল এলেও উচ্চতর গণিত, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করে সে। এ কারণে শোভন রোজারিও নামের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ফাইহার মাকে নিয়মিত ফোন করে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিতেন।

গত ২৩ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ১২তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে স্কুলছাত্র পারপিতা ফাইহা আত্মহত্যা করে। সে হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তেজগাঁও রেলস্টেশন রোডের নন্দন রোকেয়া নামের ১২ তলার অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে।

ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা রাজধানীর মনিপুরীপড়ার একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। পঞ্চম শ্রেণিতে সে মেধাবৃত্তি পায়েছিলো। এরপর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়। এখানে সে বরাবর ভালো ফলাফল করলেও নবম শ্রেণিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও গণিতে ফেল করে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন অনেক কঠিন করা হয়েছিল। এমনই কঠিন করা হয়েছিল যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের পক্ষে তা তাৎক্ষণিক সমাধানও প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির দুই শাখার মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন ফেল করেছিলো। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করেছিল ৪০ জন। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হতাশাজনক ফলের পরও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

আরও পড়ূনঃ রাজধানীতে মাদ্রাসার ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শোভন রোজারিও সপ্তম, নবম ও ১০ম শ্রেণির উচ্চতর বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। তিনি নিজ স্কুলের এ তিন স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। যেসব ছাত্রী তার কাছে প্রাইভেট পড়বেন না তাদের ইচ্ছেকৃত ফেল করিয়ে দেওয়া হয় বলে পারপিতার সহপাঠীরা স্বীকার করেছে। যে কারণে তাদের স্যার পরীক্ষার প্রশ্ন ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কঠিন করতেন। তার কাছে না পড়লে প্রশ্ন সহজে বোঝা যায় না। তবে ফেল করা ছাত্রীদের খাতা পূনর্মূল্যায়নে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকরি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, আইডিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের উচ্চতর গণিতের তিনজন করে মোট ১২ জন শিক্ষককে দিয়ে মূল্যায়ণ করা হয়েছে। খাতা মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।

বলা হয়েছে, করোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি মেটাতে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সে কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষকরা নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান, বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানলেও এ বিষয়ে বরাবরই ছিলেন উদাসীন। পারপিতা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার সময় অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। সিক বেডে শুয়ে পরীক্ষা দেয়। এ পরীক্ষায় মেয়ে যে ভালো করতে পারবে না তা তার বাবা-মা আগেই ধারণা করেছিলেন। দুই ভাই-বোন বাবা-মা মিলে নিজস্ব একটি ফ্লাটে থাকেন পারপিতারা। ছোট ভাই পড়ে মাদরাসায়। বাবা-মায়ের কাছে অনেক আদরের মেয়ে ছিল পারপিতা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হলিক্রস স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে পাস ও ফেল করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আলাদভাবে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। ফলে কে ফেল বা পাস করছে সেটি আগেভাগেই টের পাওয়া যেতো। যা অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছে অপমানজনক বলে মনে করেন অনেকে। পারপিতার মধ্যে অনেক কষ্ট তৈরি হয়েছিলো বলে সহপাঠীদের সে জানিয়েছিলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence