বিয়ের ভয়ে পালিয়ে সেই বিয়েই করলেন সুকন্যা

ইয়াশা মৃধা সুকন্যা
ইয়াশা মৃধা সুকন্যা  © সংগৃহীত

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশা মৃধা সুকন্যার সন্ধান মিলেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন তার মা নাজমা ইসলাম লাকীর মানসিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিয়ের অভিযোগ সহ্য করতে না পেরে এ কয়েকদিন তিনি পালিয়েছিলেন। তবে সুকন্যা বিয়ের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে অবশেষে বিয়েই করেছেন বলে জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকালে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মুখোমুখি হন। সেখানে তার নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে শুরু করে পুরো ব্যাপারটা তিনি তুলে ধরেছেন।

সুকন্যা বলেন, গত ২৩ জুনের আগে আমার উপর মানসিক-শারীরিক নির্যাতন চলছিল। এরপর আমি আর টিকতে না পেরে আমার ফ্রেন্ড ইসতিয়াক আহমেদ চিশতীকে কল করি। ওকে আমি ২২ জুন বলেছি, আমরা আগামীকাল বের হবো। কথা অনুযায়ী পরেরদিন আমার মডেল টেস্ট পরীক্ষা ছিল। এদিন আম্মু আমাকে ১২টার দিকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু আমি কলেজের পৃথক আরেকটা গেট দিয়ে বের হয়ে যাই। যেখানে আমার বন্ধু অপেক্ষ করছিল। পরে আমি আর ও এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করেছি।

‘‘কিন্তু আমাকে নিয়ে আম্মু সেদিনের ঘটনায় যে বর্ণনা দিয়েছে সেটা পুরোপুরি মিথ্যা। মূলত সেদিন আমরা প্রথমে বিএফসিতে খেতে যাই। পরে সেখান থেকে বের হয়ে কার্জন হলে ঘুরতে যাই। তারপর আমার বন্ধু চিশতীর সঙ্গে গেন্ডারিয়াতে ঘুরতে যাই। পরে সেখান থেকে আমি একাই খিলগাঁও চলে আসি। সেখানে গিয়ে রিকশাওয়ালা মামার ফোন থেকে আমার হাজব্যান্ডকে ফোন করে বলি, তুমি এখানে আসতে পারবা? সে বলে আমি মাত্র অফিস থেকে বের হয়েছি, এখন ওইদিকে যেতে অনেক সময় লাগবে। পরে সে বললো, তুমি বরং মিরপুরে আসো।’’

আরও পড়ুন: ‘মেয়েকে আইফোন-লাখ টাকার ল্যাপটপ দিয়েছি, বিক্রির অভিযোগ মিথ্যা’

সুকন্যা তার হাজব্যান্ডের কথা অনুযায়ী মিরপুর চলে যান। তিনি বলেন, আমার সাথে তার দেখা হওয়ার পর সে আমার হাত ধরে বলতেছে ‘ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আমি ফ্যামিলিকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি’। ও আমাকে বারবার বলেছিল বাসায় চলে যাওয়ার জন্য।

তিনি আরও বলেন, তখন আমি তাকে একটা কথাই বলেছি, এখন যদি তুমি আমাকে বাসায় পাঠাও পরে দেখবে আমি আবার বাসা থেকে বের হয়ে যাবো। তখন কিন্তু তোমার কাছেও আসবো না, তখন হয়তো আত্মহত্যা করবো না হয় আমার পরিবারই আমাকে মেরে ফেলবে।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে গত ২৩ জুন নিখোঁজ হন ইয়াশা মৃধা সুকন্যা। এরপর তাকে জীবিত ফিরে পেতে শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ইয়াশা মৃধা সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম লাকী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটাই মাত্র মেয়ে, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো। ১৬ বছর ধরে স্বামীর অপেক্ষায় আছি, তিনি এখনও বিদেশ থেকে আসেননি, এখন দুমাস ধরে মেয়ের অপেক্ষা করছি।’’

বিয়ের কথা জানিয়ে সুকন্যা বলেন, আমি আজকে সারাদিন বাসায় ছিলাম না, তুমি আমার সবকিছু জানো। ও আমার এসব কথা শুনে ভয়ে তাড়াতাড়ি ওর একটা ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে উকিল ম্যানেজ করে নেয়। ওইদিন রাতেই সে বিয়ের কাগজপত্র সব রেডি করে ফেলে। পরে পরেরদিন ২৪ তারিখ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আমরা ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিয়ে করেছি।

এদিকে, গণমাধ্যমের কাছে সুকন্যাকে তার মায়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন তার সবগুলোই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাজমা ইসলাম লাকী।

আজ বুধবার তিনি বলেছেন, আমি নিজের বাড়িতে থাকি। যে মেয়েকে আইফোন-১২ প্রো ম্যাক্স কিনে দিতে পারি, যাকে এইচপির এক লাখ টাকার ল্যাপটপ কিনে দিতে পারি। যে মেয়েকে দুই-আড়াই লাখ টাকার ডিভাইস কিনে দিতে পারি, সেখানে তিন-চার লাখ টাকা তো কিছুই নয়। এগুলো যদি আমি নাও দিতে পারতাম তাহলে ওর চাচারাও দিতে পারতো। মেয়েকে বিক্রি করে দেবো এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।


সর্বশেষ সংবাদ