সন্তানের জন্য খুন, সহানুভূতি পাচ্ছেন বাবা!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫২ PM , আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫২ PM
অপরাধীকে ধিক্কার দেওয়া, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তার জন্য সহানুভূতি দেখানো কিছুটা নিয়মের বাইরে। সম্প্রতি এমন চিত্র দেখা গেছে সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। রাজধানী ঢাকায় গভীর রাতে প্রথমে ছিনতাই ও তাতে বাঁধা দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে হত্যার একটি ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে এমন সহানভূতি প্রকাশ করতে দেখা গেছে নেটিনেজদের। ব্যবসায়ীকে হত্যা করা ওই ব্যক্তির নাম আব্দুস সামাদ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টার দিকে সোনারগাঁও জনপথ সড়ক সংলগ্ন ডাচ-বাংলা এটিএম বুথে ছিনতাইয়ের সময় ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন ওই ছিনতাইকারী আব্দুস সামাদ। নিহত ব্যবসায়ী গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানার বাসিন্দা মো: শরিফ উল্লাহ (৪৪)। তিনি দেওড়া এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে তাঁর টাইলসের ব্যবসা আছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইয়াসিন গাজী বলেন, গ্রেফতার হওয়া আব্দুস সামাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতে বৃহস্পতিবার রাতে টাকা ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথে ঘুরতে থাকেন। তবে ইয়াসিন গাজী বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি গ্রেপ্তার হওয়া খুনি মানসিক বিকারগ্রস্ত। নাহলে টাকা জোগাড় করার জন্য কেউ এমনভাবে খুন করে না।
ঘটনাস্থল থেকে ছুরিসহ আব্দুস সামাদকে আটক করা নৈশপ্রহরী সুমন সরকার বলেন, বুথের সিকিউরিটি গার্ড চিৎকার করে বলছিলেন, বুথের ভেতর এক লোক আরেকজনকে কোপাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে গিয়ে দেখি হত্যাকারী গামছা দিয়ে রক্তমাখা ছুরি মুছে বুথ থেকে বের হচ্ছে। পরে ছুরি ফেলে দৌঁড় শুরু করে। কিন্তু হত্যাকারী ভারী লোক হওয়ায় দৌঁড়ে বেশি দূর যাওয়ার আগেই তাকে ধরে ফেলি।
আরও পড়ুন: দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটির বেশি
এদিকে ছিনতাইকালে খুন করা ওই ব্যক্তির পক্ষে সহানভূতি প্রকাশ করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সৈয়দ নাজমুস সাকিব নামক এক ব্যক্তি। যাতে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার রিয়্যাকশন জানিয়েছে। নাজমুস সাকিব তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, উত্তরায় ১১ নম্বরে এক এটিএম বুথ থেকে গতরাত আনুমানিক ১২ টা বা ১টার দিকে টাকা তুলতে গিয়ে ছিনতাইকারীর ছুরির আঘাতে মারা গেছেন এক ব্যবসায়ী। রাস্তার পথচারীদের কারণে ছিনতাইকারীকে ধরা সম্ভব হয়। কিন্তু কাহিনি আরেক জায়গায়।
এই ছিনতাইকারী পেশাদার কোনো অপরাধী নন। তার দুটি সন্তান, তাদের মাঝে একজন প্রতিবন্ধী। সেই প্রতিবন্ধী বাচ্চার চিকিৎসার টাকার জন্য, বউয়ের সাথে ঝগড়া করে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সম্প্রতি কাজ না থাকায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সোজা কথায়, অভাবে পড়ে তিনি এই কাজ করেছেন। পুলিশও তার কোন ছিনতাইয়ের পূর্ব রেকর্ড পায়নি।
তিনি আরও লিখেন, দিনকাল যেভাবে যাচ্ছে, এই ঘটনা আপনার আমার সাথেও ঘটতে পারে। খুব অহরহই ঘটতে পারে। হয় অভাবের তাড়নায় আমাদের কেউ ছিনতাইকারী হয়ে যাবে, নতুবা আমাদের মৃত্যু হবে ছিনতাইকারীর হাতে। এটাই হবে আমাদের নতুন বেহেশতের চিত্র!
বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জিহাদ নামে এক ফেসবুকার। তার বক্তব্য, ভয়ানক ক্রাইসিস এর মধ্যে পড়তে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। সকালে দুই হালি ডিম কিনলাম ১০০ টাকায়। ফিরোজ মাহাদী লিখেছেন, পরিস্থিতি আর বাস্তবতার গ্যাড়াকলে মানুষের জীবন এমন হতে পারে!
ভাবুন আমরা কি রকম দূর্যোগের মাঝে দিনাতিপাত করছি। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
অবশ্য বিপরীত মন্তব্য যে নেই, তা নয়। আছে। কাজী সাজিদ আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, খুজলে পৃথিবীর সব অপরাধেরই কোনো না কোনো এক্সপ্লেনেশান পাওয়া যাবে। কেউ বিলিয়নেয়ার হয়েও চুরি করে, কেউ আবার না খেয়ে থাকে তাও চুরি বা ভিক্ষা করে না। এই ধরনের মানসিক সমস্যা পৃথিবীর সবদেশে সব জায়গায় দেখা যায়। এসব ব্যপারকে এভাবে ন্যারেশান করে সেইমপ্যাথি শো করাটাও সমস্যার উৎপত্তির অনেকগুলো কারণের একটা।