ঢাবিতে তরুণীকে যৌন হেনস্তা, কী ঘটেছিল সেদিন রাতে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ১১:০১ AM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২২, ১১:৩৫ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের সামনে দিয়ে রিকশায় করে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা মোটরসাইকেলচালরকের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হন উম্মে হাবিবা অরনী। ট্রমার কারণে এখনো ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারছেন না তিনি। গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জামা ছেঁড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি হাইলাইট হচ্ছে। আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে। সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ধানমন্ডি থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠেন তিনি। হেডফোন কানে অন্যমনস্ক ছিলেন। সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত পেরিয়ে এফ রহমান হলের কাছাকাছি এলে পেছন থেকে বাইক চালিয়ে রিকশার বাম দিক ঘেঁষে এগিয়ে আসে মুখখোলা হেলমেট পরা মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। রাত তখন সোয়া ১২টা।
লোকটি বাম হাত দিয়ে বাইকের ক্লাচ ধরে রেখে ডান হাত দিয়ে খামচে ধরে চলমান রিকশায় বসা অরনীর বুকের কাছে। আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠেন অরনী। আশেপাশে অনেকে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এক পর্যায়ে পরনের কামিজটি গলার কাছে ছিঁড়ে যায়।
অরনী বলেন, “আমি কোনও অর্নামেন্টস পরা ছিলাম না। হাতে ফোন ছিল, ব্যাগ ছিল। সে কোনো কিছু ধরেনি। শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে আমাকে, সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে।’
মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় অরনী বাইকের নম্বর প্লেটও খেয়াল করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তখন ফার্স্ট অ্যান্ড মেইন কনসার্ন ছিল, আমার নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে হবে। সে আবার এসে আমাকে এটাক করতে পারে।’ রাত পৌনে একটার দিকে সেই রিকশা করেই বাসা পৌছান তিনি।
বাসায় ফেরার পর প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে ছেঁড়া জামার ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাত একটা এগার মিনিটে। পোস্টে লেখেন, ‘এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেওয়ার পারমিশন দিতে হবে? নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেব? আর কারে গিয়ে বললে, একটু স্বাভাবিক সিকিউরডভাবে এদেশে বাঁচতে পারব?’
আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, ৯৯৯ নম্বরে ফোন বাবার
ফেসবুক পোস্টে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কমেন্ট করেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়া। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রথমে মামলার ব্যাপারে সম্মতি না দিলেও পরে আইনজীবীর আশ্বাসে রাজি হন অরনীর মা। পরদিন শুক্রবার (১০ জুন) শাহবাগ থানায় গিয়ে মামলা করলে পুলিশ একটি দুই সদস্যবিশিষ্ট টিম ঘটনাস্থলে পাঠায়। অরনী পুলিশকে জায়গা চিহ্নিত করে ঘটনার বিবরণ দেন।
ওদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন অরনীর আইনজীবী আহসান ভূঁইয়া। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামিকে শেষ পর্যন্ত ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘তারপরও মামলা করা প্রয়োজন, যাতে এমন ঘটনায় অন্তত পক্ষে কেউ চুপ না থাকে। প্রস্পেক্টিভ ক্রিমিনালরা কিন্তু একবার হলেও চিন্তা করবে যে তাদের ধরা পরার একটা চান্স থাকবে।’
ট্রমা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান অরনী। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। এজমা এটাক হচ্ছিল, পেইন হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না। পরিবারের সবাই পাশে থেকে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে।’
আগে থেকেই রাতে চলাচলে অভ্যস্ত অরনী। একা একা ঘুরতে পছন্দ করেন। রেডিও-টিভিতে লেট নাইট শো কিংবা ভয়েজ ডাবিংয়ের কাজের জন্য প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতে হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ভাবতেন, এখানে আগে কখনো ভয় পেতে হয়নি। এখন শাহবাগ থানা থেকে রিকশায় করে একা বাড়ি ফিরতেও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
ব্যারিস্টার ভূঁইয়া জানান, মিডিয়াতে খবর আসার পর সবার টনক নড়েছে। ওসি তাকে বলেছেন, এসপিসহ ওপরের মহল থেকে চাপ আসছে। পুলিশ স্টেশন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য তাদের থানায় যেতে বলা হয়েছে।
সবাই যেভাবে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে, তা আরও অনেককে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আশা ব্যারিস্টার ভূঁইয়ার। তিনি বলেন, ‘শতকরা ১৫ ভাগ সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টও যদি কমে, আমরা মনে করতে পারবো, উই হ্যাভ এচিভড সামথিং।’