যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় শুটার আকাশকে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ১১:২৮ PM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২, ১১:২৮ PM
আওয়ামীলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার আসামি শুটার মাসুম ওরফে আকাশকে বগুড়ার হোটেল থেকে শনিবার (২৬ মার্চ) সকালে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশের একটি দল।
মাসুম বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকার খাজা হাইওয়ে হোটেলের ৬নং কক্ষে রাজন নামের এক বন্ধু মাধ্যমে নাম পরিচয় এন্ট্রি না করে রাতযাপন করছিলেন। সকাল ৯টায় তার রুম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগে সকাল সোয়া ৭টায় হোটেলে অভিযান চালিয়ে বগুড়ার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: ‘ট্রিগার চেপে রেখেছিলাম, প্রীতির গায়ে গুলি লেগেছে জানতাম না’
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে হত্যা করা হয়। তখন সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মাসুমকে গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেয়া বগুড়া সদর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এস্আই) খোরশেদ আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর মাসুম শুক্রবার (২৫ মার্চ) মামুন পরিচয়ে বগুড়ার চারমাথা এলাকার খাজা হাইওয়ে হোটেলে ওঠেন।
শনিবার (২৬ তারিখ) সকালে ঢাকার ডিবি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আকাশের অবস্থান বগুড়ার সাতমাথা এলাকার ‘খাঁজা’ নামক স্থানে বলে জানান। পরে চারমাথা এলাকার খাজা হোটেলের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।
উপপরিদর্শক এস্আই খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রথমে আমি একা বাইক নিয়ে খাজা হোটেলে যাই। সেখানে ম্যানেজারের কাছে জানতে চাই, ঢাকা থেকে আসা মাসুম নামের গেস্ট আছে কি না।
‘‘ম্যানেজার বলেন— ঢাকা থেকে একজন গেস্ট শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাত থেকে ৬নং রুমে আছেন। তবে তার নাম মামুন। এরপর আমার সন্দেহ মোটামুটি পরিষ্কার হয় এবং সদর থানা থেকে আটজনের টিম ডেকে নেই। সেই অভিযানে অংশ নেন বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান এবং উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জিল্লুর রহমান।’’
আরও পড়ুন: টিপুকে হত্যার ঘটনাটি কন্ট্রাক্ট কিলিং, ভাড়া করা হয় আকাশকে
এসআই খোরশেদ আলম বলেন, সকাল ৭টায় হোটেলের সব রুম বাইরে থেকে লক করা হয়। এরপর প্রতি রুমে তল্লাশি চালানো হয়। ৬নং রুমের ঢাকার সেই গেস্টের ছবির সঙ্গে শুটার মাসুম ওরফে আকাশের ছবি মিলে গেলে মোবাইলে তার ছবি তুলে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। পরে ডিবি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন ছবিটি শুটার মাসুমের। শুটার মাসুমকে ধরার পর তার সঙ্গে অস্ত্র আছে কি না জানতে রুমে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে তাকে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর দুপুর ২টায় ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল বগুড়া এসে আসামিকে নিয়ে যায়।
মাসুমকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্বে থাকা সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারের পর মাসুম নিজে থেকে জোড়া খুনের বর্ণনা দেন। ঢাকায় জোড়া খুনের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত। ঘটনার সময় মাসুম একাই এলোপাথাড়ি ১২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন। এরপর সেখানে থেকে অস্ত্রটি ঢাকায় লুকিয়ে রাখেন এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে হাতিরঝিলে ফেলে দেন। ঢাকা থেকে পালিয়ে হিলি অথবা জয়পুরহাটের সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এ জন্য তিনি বগুড়ায় আসেন। মাসুম এর আগেও ঢাকায় একজনকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানান। এছাড়াও তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ৫টি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান বলেন, জোড়া খুনের পর ওই রাতে মাসুম তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে সিমকার্ডসহ হাতিরঝিলে ফেলে দেন। পরের দিন তিনটি নতুন মোবাইন ফোন সেট কেনেন এবং তিনটি সিম কার্ড সংগ্রহ করেন। যার একটি নম্বর মাসুম ব্যবহার শুরু করেন। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে ঢাকা থেকে বাসযোগে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন মাসুম। বগুড়া পৌঁছার আগে রাতে তিনি মোবাইল ফোনে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর মাসুম মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কাইশকানি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মাসুম ওরফে আকাশ স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ঢাকার ৬০/১৫ পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় বসবাস করতেন।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা জানান, শুটার মাসুমকে ধরার মূল অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার ডিবি পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যে মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারে ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান, সদর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম এবং উপশহর ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক জিল্লুর রহমানকে পাঠানো হয়।