একাধিক পরকীয়ার দায়ে পুলিশ সুপারের পদাবনতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:০৩ PM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:০৩ PM
বিবাহ বর্হিভূত ‘একাধিক সম্পর্কের’ কারণে এক পুলিশ সুপারের পদাবনতি হয়েছে। পৃথক আদেশে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তার বেতন গ্রেড কমিয়ে দেওয়া হয়েছে; যার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘কুরুচীপূর্ণ’ মন্তব্যের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। তিনি আরেক সহকর্মীর সঙ্গে ফোনে এসব মন্তব্য করেন যা পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-১ শাখার জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত দুই আদেশে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ দুই কর্মকর্তার শাস্তি দেওয়া হয়। গত ২২ জুন এ নিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও ঈদের ছুটি শেষে তা গতকাল রবিবার প্রকাশিত হয়।
পরকীয়ার কারণে পদাবনতি হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত পুলিশ সুপার নিহার রঞ্জন হাওলাদার এবং বেতন গ্রেড কমিয়ে দেওয়া কর্মকর্তা হচ্ছেন পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হক। আদেশে বলা হয়েছে, তাদের এ ‘গুরুদণ্ড’ তিন বছর বলবৎ থাকবে।
পদাবনতির কারণে পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে নেমে যাওয়ার কথা নিহার রঞ্জনের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার থাকাকালে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নিহার রঞ্জন। তার স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। পরে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে সদাচারণের অঙ্গীকার করেন।
এরপর আবারও এ কর্মকর্তা পুলিশের এক নারী পরিদর্শকসহ একাধিক ‘পরকীয়ায়’ জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ফোনে কথোপকথন, ক্ষুদেবার্তা আদানপ্রদান, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলের বাইরে থাকা, ভুয়া ট্যুর ডায়েরি দাখিল করার প্রমাণ পাওয়া গেলে নিহার রঞ্জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রথম দফায় কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব না দেওয়ায় নিয়মানুযায়ী একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পরে তিনি অভিযোগের প্রমাণ পান। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন, দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এসব কারণে “সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি-৪(৩) এর উপ-বিধি (১)(ক) অনুযায়ী আগামী তিন বছরের জন্য ‘নিম্নপদে অবনমিতকরণ' গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়,” বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
একই দিন পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাজশাহীতে র্যাব ৫ এ পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০২১ সালের ১৯ মে রাজশাহী মহানগর পুলিশে কর্মরত এক কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, শিষ্ঠাচার বহির্ভূত স্পর্শকাতর’ ফোনালাপ করেন, যা পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ ঘটনায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হলে ওই বছর ৬ ডিসেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ব্যক্তিগত শুনানি ও দালিলিক প্রমাণ পর্যালোচনা করে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরপর তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন এবং নিয়ম অনুযায়ী পর্যালোচনা শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এজন্য “তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৩) এর উপ-বিধি (১)(ক) অনুসারে আগামী তিন বছরের জন্য ‘নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ’ এর মাধ্যমে গুরুদণ্ড প্রদান করার” কথা বলা হয়েছে।