প্রাথমিকের শিক্ষক হতে চাইলে যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন

প্রাথমিকের শিক্ষক পরীক্ষা
প্রাথমিকের শিক্ষক পরীক্ষা  © ফাইল ফটো

আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ১৩ লাখ। একটি পদের জন্য লড়বেন প্রায় ৪০ জন পরীক্ষার্থী। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিজেকে সঠিক ভাবে প্রস্তুত করেত হবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক হতে চান তারা যেভাবে নিজেকে প্রস্তুতি করবেন, সে বিষয়টি নিয়ে আজ আলোচনা করা হল।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মোট নম্বর থাকবে ১০০, লিখিত পরীক্ষার ৮০ নম্বর এবং মৌখিক পরীক্ষার ২০ নম্বর। কেবল আপনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ডাকা হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে।

পরীক্ষায় প্রশ্ন তৈরি হবে হবে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের উপর। প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে।

প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ১ নম্বর এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য আপনার ০.২৫ নম্বর কেটে নেয়া হবে। অর্থাৎ ৪টি ভুল উত্তর হলেই আপনার প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা হবে।

প্রতিটি বিষয়ের জন্য আপনাকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি ৮০ নম্বরের মধ্যে আপনি ৭০ এর বেশি নম্বর পান তাহলে আপনি নিরাপদে থাকবেন। তাই শুরু থেকেই আপনাকে ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

কোনরকমের অবহেলা করা যাবেনা কারণ আপনাকে অনেক প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া আপনার জীবন ও ভবিষ্যৎ একটি চাকরির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

নিচে বিভিন্ন বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হল।

বাংলা
প্রথমেই বাংলা ব্যাকরণ অংশের উপর বেশি জোর দিতে হবে। ৮ম ও ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে জানতে হবে ।

এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিতি বা সাহিত্যিক পরিচিতি অংশ পড়লে অনেকটা সহায়ক হবে। পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে পড়বেন। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, সন্ধি বিচ্ছেদ,বর্ণ, শব্দ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, বানান শুদ্ধি, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস,পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন থাকে।

সাহিত্য অংশের গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা ও কবিতার লাইন দিয়ে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট বই বা অন্য যে কোন গাইডে এই সব বিষয়গুলো গুছিয়ে দেয়া আছে। সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।

ইংরেজি
ইংরেজি গ্রামারের Tense, Preposition, Right forms of verb, Parts of Speech, Spelling, Voice, Narration, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। গ্রামারের এই টপিকস গুলো Advance Learners by Chowdhury and Hossain বা অন্য যে কোন গ্রামার বই থেকে উদাহরণসহ পড়ুন। Phrase and Idoims, Synonym, Antonym মুখস্থ করতে হবে ।

ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে। এজন্য ২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ সমাধান করতে পারেন। বিসিএস তাছাড়া প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট বইয়ের ইংরেজি অংশটুকু ভালভাবে পড়তে পারেন।

গণিত
গণিত অংশে মার্কস পাওয়া সহজ। ২-৩ ঘণ্টা করে প্রতিদিন গণিত অনুশীলন করা প্রয়োজন। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, সুদকষা,অনুপাত, শতকরা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে।

মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার অনুশীলন করতে হবে যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ অনুশীলন করবেন।

যাঁরা শর্টকাট প্রস্তুতি নিবেন তাঁদের জন্য: দশমিকের (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ), শতকরা, লাভ-ক্ষতি, মুনাফা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, ঐকিক নিয়ম (কাজ, খাদ্য, সৈন্য), অনুপাত, সমানুপাত, সংখ্যা পদ্ধতি, বীজগাণিতিক মান নির্ণয়, উৎপাদক নির্ণয়, গড়, মধ্যক, প্রচুরক নির্ণয়, ত্রিভুজক্ষেত্র, বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্রের বেসিক সূত্রের অঙ্কসমূহ, সরলরেখা, ধারা, গাছের উচ্চতা/মিনারের উচ্চতা/মইয়ের দৈর্ঘ্য/সূর্যের উন্নতি কোণ ইত্যাদি। জ্যামিতিক অংশের অনুশীলনীর জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ষষ্ঠ-নবম শ্রেণির বোর্ড বইয়ের জ্যামিতিক অংশ অনুশীলন করলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।

সাধারণ জ্ঞান
বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন বেশি আসে। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি,ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ ও জাতীয় দিবস থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।

আর আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন সংস্থা, দেশ,রাজধানী, মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে।মাসিক কারেন্ট এফেয়ার্স সাম্প্রতিক বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য পড়তে পারেন।

সাধারণ বিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন রোগব্যাধি, পুষ্টি, ভিটামিন,খাদ্যগুণ, থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।প্রশ্ন থাকে কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয় থেকেও। এজন্য কম্পিউটার ও আইসিটির বেসিক বিষয় গুলো ভালভাবে জানতে হবে।

২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা বিজ্ঞান, আইসিটি ও কম্পিউটার বিষয়ের প্রশ্ন গুলো ভালভাবে পড়লে বেশ কিছু কমন পেতে পারেন।

উপরের পরামর্শ গুলো শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্যই নয়। অন্যান্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির জন্যও প্রযোজ্য। এইভাবে পড়লে আশা করি আপনি ভাল নম্বর পাবেন।আপনি চাইলে যিনি আরো ভাল জানেন বা নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ