সাত বছরেও শেষ হয়নি সরকারি নিয়োগ, যা বলছেন প্রতিমন্ত্রী

সরকারি নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা
সরকারি নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বাপেক্স) সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৭ বছর পর লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র পান চাকরিপ্রার্থীরা। সম্প্রতি লিখিত পরীক্ষার ফলফল প্রকাশ হয়েছে। তবে মৌখিক পরীক্ষা কবে হবে তা জানা নেই কারও। সরকারি চাকরির এমন হযবরল অবস্থা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

বাপেক্সের পরীক্ষায় অংশ নেয়া এক পরীক্ষার্থী জানান, মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে করে তিনি এখন সন্তানের মা। বাপেক্সে আবেদনের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। তবে সাত বছর পর গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় যায় প্রবেশপত্র। পরে ঢাকায় পরীক্ষায় অংশ নেন। তার মতো আরও অনেকে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ার এমন দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বারবার তাগাদা দিয়েও নিয়োগে গতি আসছে না। সীমিত পদে তুমুল প্রতিযোগিতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সময় ক্ষেপণে চাকরিপ্রত্যাশীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ, দুর্নীতি এবং মামলা এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এক চাকরিপ্রার্থীর সম্প্রতি বয়স শেষ হয়েছে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি অনেক চাকরির আবেদন করেছি যেগুলো পরে আর খোঁজ রাখিনি। কারণ বছরের পর বছর পার হলেও সেগুলোর পরীক্ষা হয়নি। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে পরীক্ষার মেসেজ আসে। নানান কারণে অনেক পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি।

আরো পড়ুন: রাত পোহালেই আরেকটি বিসিএস পরীক্ষা, গতি আনতে যেসব উদ্যোগ

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি চাকরির পদ আছে ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। কর্মরত আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। নতুন নিয়োগ দেওয়ার মতো পদ খালি তিন লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এরইমধ্যে বিসিএসের গতি বাড়াতে এবং নিয়োগের সময় কমাতে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) নতুন করে চারজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়োগে ধীরগতির শীর্ষে রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি অধিদপ্তরে নিয়োগসংক্রান্ত দুর্নীতির কারণে এক যুগ্ম সচিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অধিদপ্তরের ১৩তম গ্রেডের উপপরিদর্শক পদের চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় প্রার্থীরা। এ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে। ২০২১ সালের নভেম্বরে লিখিত পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষা হয় গত বছরের জুনে। এরপর ১১ মাস পার হলেও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগও ওঠে।

উপজেলা পোস্টমাস্টার এবং পরিদর্শকসহ ডাক অধিদপ্তরের ছয় পদে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবেদন চাওয়া হয়। ২০২২ সালের জুনে ‘পোস্টমাস্টার’ পদের লিখিত এবং নভেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। তবে কবে ফল প্রকাশ হবে, তা জানেন না কেউ। পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষাও হয়নি।

আরো পড়ুন: সরকারি চাকরিতে পদ খালি ৩ লাখ ৫৮ হাজার

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টাফ অফিসার এবং স্টেশন অফিসার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা হয়েছে গত সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে। স্টাফ অফিসারের লিখিত পরীক্ষার ফল হলেও ভাইভার অপেক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা। স্টেশন অফিসারের লিখিত ফল প্রকাশ হয়নি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি নিয়োগে সময় লাগে, করোনাকালে আরও বেশি সময় নিয়েছে। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুকে নিয়োগ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেগুলোয় মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা নেই, সেগুলো দ্রুত করতে ফের নির্দেশনা পাঠানো হবে। সরকারি নিয়োগে সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, এটা ঠিক। তবে সময় বেঁধে দিলে নতুন জটিলতা তৈরি হয় কিনা, সেটাও ভাবতে  হবে।


সর্বশেষ সংবাদ