৪ কোটি শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেবে আজ

*পৌনে ৩১ কোটি নতুন পাঠ্যবই দেয়া হবে *প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় বই উৎসব মিরপুরে, মাধ্যমিকের উৎসবে ইসির মানা *প্রথমদিনে শতভাগ বই পাবে না শিক্ষার্থী

প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীর জন্য পৌনে ৩১ কোটি বিনামূল্যে নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হচ্ছে
প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীর জন্য পৌনে ৩১ কোটি বিনামূল্যে নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হচ্ছে  © টিডিসি ফটো

এবারও নতুন বছরের প্রথম দিন উৎসব করে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবার প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার্থীর জন্য পৌনে ৩১ কোটি বিনামূল্যে নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত বছরের মতো এবারও শতভাগ বই ছাড়াই উদ্‌যাপিত হবে এই উৎসব। 

রেওয়াজ অনুযায়ী, রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সোমবার নতুন বছরের প্রথম দিন সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই উৎসব পালন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সে কারণে এবার মাধ্যমিক স্তরে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালন করা হবে না। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রতীকীভাবে বই উৎসব পালন করবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, সব বই পাঠানো হয়েছে। অষ্টম-নবমের অধিকাংশ বই পাঠানো হয়েছে। কিছু বই বাকি আছে। সেগুলোও চলে যাবে। 

এনসিটিবি জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি ও সমমান পর্যন্ত তিন কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রথমিক ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই।  প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।

মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ, থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই।

ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্য বই।  এসএসসি ভকেশনাল ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্য বই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হবে ৭২৮টি বই। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।

প্রথমদিনে শতভাগ বই পাবে না শিক্ষার্থী
এবারও শতভাগ বই ছাড়াই উদ্‌যাপিত হবে বই বিতরণ উৎসব। প্রাথমিকের সব বই প্রস্তুত হলেও মাধ্যমিকের দুই শ্রেণির বেশ কয়েকটি বই এখনো ছাপাখানায়। এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭ কপি বই ছাপানো হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্রায় ৬১ লাখ ৯৩ হাজার কপি বই রয়েছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির জন্য ২১ কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ১৫২ কপি বই ছাপানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি ৪১ লাখ বই ছাপানোর কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়নি। শেষ সময়ে মোট বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বই দিয়ে করা হবে উৎসব। নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ কোটি ৮১ লাখের বেশি।

প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় বই উৎসব মিরপুরে
সোমবার সকাল ১০টায় ১লা জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রধান অতিথি ও মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৯ জন, প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৪ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৪ হাজার ৪৭৩ জন— সর্বমোট ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার হয় জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬টি বই বিতরণ করা হব।

মাধ্যমিকের উৎসবে ইসির মানা
ভোটের সময় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। সে কারণে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে কুমিল্লার তোফাজ্জল আহমেদ চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিকের বই উৎসবের বিষয়ে ইসির অনুমতি চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এই উৎসব করতে নিষেধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আরো পড়ুন: পিএসসি’র আদলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাবে এনটিআরসিএ

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।

সেখানে বলা হয়, অন্যান্য বছরের ন্যায় পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সমগ্রদেশে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ সক্রান্ত 'বই উৎসব' সরকারের রুটিন কাজ হিসেবে আয়োজনে নির্বাচন কমিশন সম্মতি প্রদান করেছেন। মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে নিজ নিজ কর্মস্থলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথানিয়মে বই বিতরণ করবেন।

"মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরুর সদয় সম্মতি প্রদান করলে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন সুয়াগঞ্জ তফাজ্জল আহাম্মদ চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুষ্ঠান আয়োজনে মাননীয় নির্বাচন কমিশন অসম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।"

জানা যায়, সরকার ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৬৪ কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। ২০১৭ সাল থেকে সরকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় অধ্যয়নের জন্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি ভাষার বই বিতরণের পাশাপাশি অন্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বই বিতরণ করছে।


সর্বশেষ সংবাদ