এক প্রজ্ঞাপন ঘিরে মন্ত্রাণালয়ে বাকৃবির চার চিঠি
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ০৬:৩৬ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ০৬:৩৬ PM
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনকে ঘিরে গত ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চারটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসন। একই বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের নির্দেশক্রমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত একাধিক চিঠি পাঠানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদীয় ছাত্র সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন অফিসের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে জানানো হয়, দুই অনুষদের আন্দোলনের মাঝেই গত ১৩ জুন নিয়োগ বিধিমালায় ডিভিএম ডিগ্রিধারীদের প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভূক্তি করতে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়ালের নির্দেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি প্রদান করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহ্। ১৩ জুনে পাঠানো চিঠিতে তথ্য ভুল ছিল উল্লেখ করে চিঠিটি বাতিলের জন্য ১৮ জুন আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়।
পরে ১৮ তারিখের চিঠি বাতিল করতে ১৯ তারিখ আরেক চিঠি পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০ জুন চতুর্থবারের মতো সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে ১৩ তারিখ হতে প্রেরিত সকল চিঠিকে আমলে না নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বারবার চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই অনুষদের শিক্ষার্থীরাও।
ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল ডিনের পাশাপাশি উপাচার্যের চলতি দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু আরেক অধ্যাপককে ভেটেরিনারি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিনের দায়িত্ব দিয়ে নিজে শুধু উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন বলেও অভিযোগ পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার ও ক্যাডার বহির্ভূত প্রাণি উৎপাদন সংক্রান্ত পদসমূহে নিয়োগসহ মোট ছয় দফা দাবিও জানানো হয়।
দুই অনুষদের আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে রূপ ধারণ করে। -উপাচার্য
দাবিগুলো হলো- প্রাণিসম্পদ সেক্টরকে প্রাণিজ উৎপাদন ও পশুচিকিৎসা দুইটি শাখায় বিভক্তিকরণ, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল গঠন, নন-ক্যাডার পদসমূহে কম্বাইন্ড ডিগ্রির অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা, উপজেলা পর্যায়ে শুধুমাত্র পশুপালন ডিগ্রিধারীদের জন্য লাইভস্টক এক্সটেনশন অফিসার পদ সৃষ্টি করা, প্রাণিসম্পদ সেক্টরের জন্য উন্নয়নমূলক বোর্ড গঠন এবং জেলা পর্যায়ে অ্যানিমেল নিউট্রিশন কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি ও পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসারের পদসংখ্যা বৃদ্ধি করা।
পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আখতারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, অধ্যাপক ড. ব্যাপন দে, ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আশিকুল ইসলাম, পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি মো. রেজওয়ান উল আমিন, সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুই অনুষদের টানা আন্দোলনে অচলাবস্থা বাকৃবিতে
অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশিদের ছবি পুড়িয়েছে যা হীনমন্যতার পরিচয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ড. ছাজেদা আখতার বলেন, ১৩ তারিখের চিঠির বিষয়ে পশুপালন অনুষদের ডিনকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। উপাচার্যের সম্মতি ছাড়া কখনই কোনো চিঠি প্রেরণ সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির চলতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, দুই অনুষদের আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে রূপ ধারণ করে। বিষয়গুলো অস্বাভাবিকের দিকে মোড় নিলে প্রেরিত চিঠিগুলো বাতিল করার জন্য পুনরায় চিঠি প্রেরণ করা হয়। আর আন্দোলনে সচিবের ছবি পোড়ানোর কাজটিকে আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না।
গত ৩০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নন ক্যাডার ও ক্যাডার বহির্ভুত নিয়োগ বিধিমালালা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রাণি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, পোল্ট্রি উন্নয়ন কর্মকর্তা, প্রাণি উৎপাদন কর্মকর্তা, জ্যু কর্মকর্তা, সহকারি ব্যবস্থাপক কর্মকর্তা পদে পশুপালন গ্রাজুয়েটদের পাশাপাশি ভেটেরিনারি সাইন্স ও এনিমেল হাজবেন্ড্রি তথা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ বিধিমালায় ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিধারীদের সুযোগ দিতে আন্দোলন শুরু করেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অন্তভূক্তি বাতিল করতে আন্দোলন শুরু করেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।