৩ মাসের ব্যবধানে বাকৃবিতে রিকশা ভাড়া ৫০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা

বাকৃবিতে রিকশা ও অটো রিকশা, দুই ধরনের যান চলাচল করে
বাকৃবিতে রিকশা ও অটো রিকশা, দুই ধরনের যান চলাচল করে  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অভ্যন্তরীণ কিংবা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতে অটোরিকশা ব্যবহার করেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি যাতায়াতের মাধ্যম রিকশা ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। ভাড়া বেশি কেন নিচ্ছে জানতে চাইলে অটো রিকশাওয়ালাদের একটাই উত্তর ‘জিনিসপত্রের দাম বেশি তাই ভাড়াও বেশি’। এদিকে শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অতিরিক্ত ভাড়া। এ সমস্যা সমাধানে ভাড়া ন্যায্যমূল্যে ধার্য করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিন মাস আগেও যেখানে বাকৃবির আব্দুল জব্বার মোড় থেকে গাঙ্গিনার পাড় যেতে রিকশা ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে ওই ভাড়া ভেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। বাকৃবির অনেক শিক্ষার্থী শহরের সানকি পাড়া, আকোয়া, টাউন হল ও পুলিশ লাইনে টিউশন করাতে যান। এসব যাতায়াতে রিকশাওয়ালারা স্থান ভেদে ভাড়া ১০-৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাবি করছেন।

হঠাৎ করে রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় টিউশনিতে যেতে অসুবিধা হচ্ছে। এমনিতেই ভাড়া বেশি, তার সাথে রিকশাওয়ালা খুব বাজে ব্যবহার করে। তাদের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণ জানতে চাইলেই বলে ‘রিকশা কম তাই ভাড়া বেশি’।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা রিকশাচালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দরকারি সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কিংবা হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।

এছাড়া ক্যাম্পাস নেই কোন রিকশা ভাড়ার তালিকা। আব্দুল জব্বার থেকে টাউনহল পর্যন্ত যেতে আগে যে রিকশা ভাড়া ছিল ৬০ টাকা, হঠাৎ করে সেটা ভেড়ে এখন হয়েছে ৮০-৯০ টাকা। আগে ব্রীজ থেকে কেওয়াটখালী বাজার যেতে অটো ভাড়া ৫ টাকা নিত। এখন এই ভাড়া বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা।

আরও পড়ুন: রিকশা ভাড়া নির্ধারণে ক্রেডিটবাজি ডাকসু নেতাদের

ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেও ভাড়া বেড়েছে স্থানভেদে ১০-১৫ টাকা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল থেকে আব্দুল জব্বার মোড় যেতে আগে লাগতো ১০ টাকা। এখন লাগছে ১৫-২০ টাকা। অনেক সময় দেখা যায় রিকশা কম থাকলে কোনো কারণ ছাড়াই আরও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন চালকরা।

পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ বলেন, হঠাৎ করে রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় টিউশনিতে যেতে অসুবিধা হচ্ছে। এমনিতেই ভাড়া বেশি, তার সাথে রিকশাওয়ালা খুব বাজে ব্যবহার করে। তাদের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণ জানতে চাইলেই বলে ‘রিকশা কম তাই ভাড়া বেশি’। আবার ঝড়-বৃষ্টির কারণ দেখিয়েও তারা ভাড়া বেশি চান।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে দাড়ানো একজন অটো রিকশাওয়ালা বলেন, ‘একদিন পরপর শহরে অটো নিতে দেয়। বাকি তিন দিন এলাকার মধ্যে ভাড়া মারি। তেমন বাড়া মারতে পারি না। দৈনিক সাতশ-আটশ জমা দেওয়া লাগে মালিকের কাছে। আগের থেইক্কা জিনিস পত্রের দামও বাড়ছে অনেক। এরপর নিজের তিনবেলা খাওন, সংসারের খরচা তো আছেই। এর জনই বাড়াইয়া দিছে সবাই ভাড়া।’

আরও পড়ুন: রিকশা ভাড়া নির্ধারণের পর তাদারকিতেও ছাত্রলীগ

সমস্যা সমাধানে মারুফ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্তত ক্যাম্পাসের মধ্যে যে রিকশা বা অটোগুলা চলাচল করে, সেগুলার একটা নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা করা উচিত। নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা থেকে বেশি দাবি করলে সে ক্যাম্পাসে রিকশা চলাতে পারবে না; এমনটাও করা যেতে পারে। যারা ক্যাম্পাসে রিকশা চালাবে, তারা তালিকাভুক্ত এবং তাদেরকে একই রংয়ের একটা কটি দেয়া যেতে পারে।

রিকশা বা অটোর মালিকানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিকশার ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিদিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার রাস্তা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে ভাড়ার নির্ধারণ করে তালিকা করে দেওয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইদের পর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, রিকশা বা অটোর মালিকানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিকশার ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিদিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার রাস্তা রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট এরিয়া হলে আমরা ভাড়া নির্ধারণ করতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন রিকশা বা অটোর ভাড়া নির্ধারণ করলে সেটা ভালো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ