মেধাবীদের ভর্তি পরীক্ষা ১০ স্থানে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেই ৫ বিশ্ববিদ্যালয়

এবারও সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে ভর্তিচ্ছুদের
এবারও সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে ভর্তিচ্ছুদের  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও আগের নিয়মেই এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নম্বর কমানোর ঘোষণা দিয়ে আগের নিয়মেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আরও চার বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তারাও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।

গত ২১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। এই সিদ্ধান্তের পর অন্য চার বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথে হাঁটছে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় ভোগান্তি লাঘব ও করোনার বিষয়টি চিন্তা করছি। এ জন্য ডিনরা বিভাগীয় শহরেও পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। বিষয়টি চূড়ান্ত করবে ভর্তি কমিটি। আমরা ১০০ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন পরিকল্পনা করে এগোতে হয়।’ নিজস্ব নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও আগে থেকেই বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরিচালিত হয় বিশেষ আইনে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাদেরকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বাধ্য করতে পারে না। বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বুয়েটে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে গত বছরই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, শীর্ষ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সিদ্ধান্ত বদল করতে পারে। ফলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য করোনার মধ্যেই সারাদেশে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যেতে হবে। ভর্তিচ্ছুদের কমপক্ষে ১০ জায়গায় এবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে হতে পারে। অথচ জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা হলে আগামী জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি থেকে কোটি কোটি টাকা আয় হয় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এজন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসতে চায় না তারা। এ ছাড়া তারা নিজেদের ভিন্নভাবে দেখতে পছন্দ করে। ফলে ২০০৭ সাল থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে তাদের অনাগ্রহের কারণে তা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পৃথক আবেদন করতে হয় না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফরম বিক্রির টাকা ভাগ হয়ে যাবে। এতে বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় অনেকাংশেই কমে যাবে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থাকে শীর্ষ এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার। এছাড়া মেডিকেল কলেজেও পরীক্ষা দেবেন। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসলে আরও অন্তত তিনটি পরীক্ষায় বসতে হবে। সবমিলিয়ে বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটিতে দুটি ইউনিটে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিলেও তাদের অন্তত ১০টিরও বেশি পরীক্ষা দিতে হবে।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নিজেরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম আমরা। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলাম। যেহেতু রাষ্ট্রপতিও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসাটা তাদের দায়িত্ব। বাকি যারা আছে তাদেরও জোর করে চাপিয়ে দিতে পারব না।’ এসময় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুর্দশা লাঘবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ