আক্কাসুর রহমান আঁখি হল © টিডিসি ফটো
আওয়ামী শাসনামলে সরকারি তিতুমীর কলেজের আক্কাসুর রহমান আঁখি হল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। আঁখি হল থেকে মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ভাঙচুরের শিকার হয় হলটি। এরপর থেকে হলটি তালাবদ্ধ রয়েছে। কলেজ প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে হলটি সংস্কার করে পুনরায় চালুর আশ্বাস দিলেও এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে, তবুও এ নিয়ে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হলটিতে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তিতুমীর কলেজের আক্কাসুর রহমান আঁখি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেদিন ছাত্র-জনতা দীর্ঘদিন ধরে দখলদারিত্ব করা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে হল থেকে বিতাড়িত করতে আকস্মিকভাবে হামলা চালায়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় হলের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। অধিকাংশ কক্ষের জানালা-দরজা ভেঙে যায়, আসবাবপত্র নষ্ট হয় এবং হলের পরিবেশ সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে।
যদিও ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে ভাঙচুরের কারণে আঁখি হলটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে হলটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। তারপর থেকেই আঁখি হল তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কলেজ প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে এখনো হলটি সংস্কার করে চালু করা সম্ভবত হয়নি। ফলে কলেজে পড়তে আসা বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান তিতুমীর শিক্ষার্থীদের, ঐতিহ্য রক্ষার দাবি
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আক্কাসুর রহমান আঁখি হলটি একেবারেই বিধ্বস্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। হলের প্রতিটি কক্ষই দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ভাঙচুর ও অবহেলার চিহ্ন বহন করছে। কক্ষগুলোর জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে, ফলে ভেতরে আলো-বাতাস সহজেই প্রবেশ করছে। তবে সেই ভাঙা জানালা দিয়ে ধুলোবালি আর ময়লাও জমেছে, যা আরও নোংরা পরিবেশ তৈরি করেছে।
হলের কক্ষগুলোতে এখনো পড়ে আছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, পড়ার টেবিল-চেয়ার, খাটপালংসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় এসব জিনিসপত্র এখন ধুলোয় ঢেকে গেছে, কোথাও কোথাও পোকামাকড়ের উপদ্রবও দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে হলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সীমিত হওয়ায় ভবনের দেয়ালজুড়ে শ্যাওলা জমেছে। ভেজা-স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দেয়ালের রং উঠে গিয়ে জায়গায় জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। সিঁড়ি, করিডোর আর বারান্দাগুলোতেও জমেছে ময়লা ও আবর্জনা।
এক সময় আঁখি হলের ডাইনিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটিতে বর্তমানে কলেজের কয়েকজন কর্মচারীকে অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেখা যায়।
কলেজের এক কর্মচারী জানান, হলটি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। এখন কাজ শুরু করলেও নতুন বছরের আগে চালু করা সম্ভব না।
আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের এখনো টেন্ডার হয়নি তবে, ইঞ্জিনিয়ার বলেছে টেন্ডার হবে। এ হলো হলের বর্তমান অবস্থা। টেন্ডার হলে কাজ শুরু হবে আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি—অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ, অধ্যক্ষ সরকারি তিতুমীর কলেজ
হাসিবুল হোসাইন শিমুল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আঁখি হলে অতীতে শিক্ষার্থীরা থাকতেন, নতুন করে তৈরি করতে হবে না, শুধু সংস্কার করলেই চালু করা সম্ভব। অথচ এ নিয়ে তালবাহানা করে এক বছরেরও বেশি সময় পার করে দিয়েছে প্রশাসন। কলেজ প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণেই এতো সময় লাগছে। এ সময় তিনি কলেজ প্রশাসনের কাছে দ্রুততম সময়ে আঁখি হল চালুর দাবি জানান।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমরান মোল্লা বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে আক্কাসুর রহমান আঁখি হল থেকে ছাত্রলীগকে উচ্ছেদ করা হয়। সেদিন শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যার ফলে হলটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এরপরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নবনির্মিত শহীদ মামুন হল খুলে দেওয়া হয়। কলেজ প্রশাসন তখন আশ্বাস দিয়েছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙচুরের শিকার আঁখি খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করলেও এখনো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
ইমরানের অভিযোগ, কলেজ প্রশাসনের সুস্পষ্ট উদাসীনতাই এর মূল কারণ। তিনি বলেন, যদি প্রশাসনের মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকত, তবে মামুন হলের মতো আঁখি হলও আজ শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ থাকত।
হল চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের এখনো টেন্ডার হয়নি তবে, ইঞ্জিনিয়ার বলেছে টেন্ডার হবে। এ হলো হলের বর্তমান অবস্থা। টেন্ডার হলে কাজ শুরু হবে আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি।