বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি অভিযুক্ত কুবির সাবেক প্রক্টরদের

০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫১ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৪ AM
 সাবেক প্রক্টর কাজী উমর সিদ্দিকী এবং সাবেক সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত

সাবেক প্রক্টর কাজী উমর সিদ্দিকী এবং সাবেক সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের উপস্থিতিতে গতবছরের ১১ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চত্বরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা চালানো হয়। পরদিন ১২ জুলাই হামলার প্রতিবাদে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে সেই সময়ে চলমান সংকট ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য এই প্রক্টরই দায়ী ছিলেন। 

১২ জুলাই বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রক্টরের অপসারণ এবং হামলায় অংশগ্রহণ করা পুলিশ সদস্যদের তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।

পথে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র আন্দোলন চত্বরে’ (আন্সার ক্যাম্প মোড়) আহতদের স্মরণে ১ মিনিটের নিরবতা কর্মসূচি পালন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনা করেন। এ ছাড়াও প্রক্টরের নীরবতার কারণে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন।

সেই সময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুমন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ বিনা উস্কানীতে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। আমাদের ৩০ এর অধিক ভাইয়েরা রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে নিদারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তাদের যন্ত্রণার আওয়াজ, কান্নার আওয়াজ সারা বাংলাদেশে অলি গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের এই আওয়াজ যাদের কানে যাওয়ার কথা ছিল তারা কানে তুলা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তাই এই হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়া প্রক্টরকে যতদিন অপসারণ করা হবে না ততদিন আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

এর আগে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈন ও প্রক্টরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান এবং জুতা ও বোতল নিক্ষেপ করে পাঠিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে অপসারণের দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

যোগদানের পর থেকেই কাজী ওমর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। শিক্ষকদের উপর উচ্চবাচ্য ও হামলা, অছাত্র ও বহিরাগতদের ইন্ধন দিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা করানো, ভূমি বাণিজ্য সহ নানা অভিযোগ থাকার পরেও উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী একজন নারী শিক্ষকের সাথে উচ্চবাচ্য করেন। ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বে হামলার সময় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদককে ঘুষি মারেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি মূলত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের প্রশাসনকে বিপদগামী করছেন। এমনকি নিয়োগের পর থেকেই তিনি প্রতিটি উপাচার্যের শুরুর দিকে উপাচার্য থেকে বিভিন্ন পদ ভাগিয়ে নিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করেন এবং শেষ সময়ে এসে তার বিরুদ্ধাচারণ করেন।

প্রক্টর হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন হামলায় ইন্ধন দেওয়ার। ২০২২ সালের ২২ মার্চ কাজী ওমর সিদ্দিকীর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০ জন অধ্যাপক কর্মরত ছিলেন। সহকারী অধ্যাপক হয়েও তিনি প্রক্টরের পদ ভাগিয়ে নেন। যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।

২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বর্তমান বিজয়-২৪) হল ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। প্রক্টরিয়াল বডি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুই দিন ধরে চলতে থাকে এ সংঘর্ষ।

গত বছরের ১ অক্টোবর শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির গুজব ছড়ালে শাখা ছাত্রলীগের ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত কয়েকজন নেতাকর্মী শতাধিক বহিরাগত নিয়ে প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এদের মধ্যে স্থানীয় দোকানদার, সিএনজি চালকসহ অছাত্র ও হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আসামিও ছিলেন। তাদের প্রবেশের সময় ক্যাম্পাসের ফটকেই অবস্থান করছিলেন প্রক্টর। তার সামনে বহিরাগতরা গুলি ছুড়লেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন অছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বর্তমান বিজয়-২৪) হলে উঠতে গেলে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রক্টর বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক অছাত্র দাবি করেন, প্রক্টরের নির্দেশেই তারা হলে উঠার চেষ্টা করেন। বাকবিতন্ডার জের ধরে গত ৭ মার্চ এনায়েত উল্লাহ ও সালমান চৌধুরীকে সাময়িক বহিষ্কার করে কুবি প্রশাসন।

২০১৬ সালে নিহত খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিপ্লব দাসকে সন্ধ্যাকালীন কোর্সে ভর্তি হতে সুযোগ করে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে প্রক্টরের বিরুদ্ধে। হত্যা মামলায় জবানবন্দি দেওয়া আসামিকে ফের ভর্তির সুযোগ করে দিতে ওমর সিদ্দিকীর যোগসাজশেই এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

ওই বছরের ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আল আমিনের দোকানের সামনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী ও বিজ্ঞান অনুষদের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহানকে বেধড়ক মারধর করে সেই বিপ্লব চন্দ্র দাস ও স্থানীয় যুবদল কর্মী রনি মজুমদার। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, প্রক্টরের ইন্ধনেই তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ভূমি বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ভূমি অধিগ্রহণের আগে ৬১১৩ এবং ৬১১৪ নম্বর দাগে নিজের নামে জমি ক্রয় করে রাখেন। অন্য ব্যক্তির নামেও জমি কিনেছেন তিনি। ৬১১৪ নম্বর দাগে জমির দখলদার আবদুর রাজ্জাক ও আবদুছ সালাম হলেও সেখানে কাজী ওমর সিদ্দিকীর মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে।

বিগত উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এমরান কবির চৌধুরীর মেয়াদের শুরুর দিকে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ওমর সিদ্দিকী কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ পদ নেন। তার আমলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সদস্য হন তিনি। তবে তার মেয়াদের শেষদিকে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে এমরান কবিরের বিরোধিতা করেন কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ শিক্ষকদের একটি অংশ। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ছুটিবিহীন পিএইচডি নেওয়া, পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবেক সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত প্রতিবেদকের সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কল কেটে দেন। এরপর তিনি আর কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, ‘আমি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেখানে গিয়েছি। সবার ব্যাকগ্রাউন্ড আমি ওইভাবে জানিনা। এখন যেহেতু জানতে পেরেছি এটা নিয়ে অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে কথা বলব। এতোদিন হয়ে গেল আমাকে কেউ এসব বিষয়ে জানাননি। সবকিছু খোঁজ-খবর নিয়ে আমরা ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।’

খালেদা জিয়া আর নেই
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
জবির প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন আজ, ১৭৮ বুথে হবে ভোটগ্রহণ
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
৬ষষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
খালেদা জিয়াকে দেখে এভারকেয়ার থেকে রাত ২টায় বের হলেন তারেক র…
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বাবরের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন তার স্ত্রী
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশজুড়ে তীব্র শীতে কষ্টে মানুষ, শৈত্যপ্রবাহ থাকবে কতদিন?
  • ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫