তানহা বিনতে বাশার © সংগৃহীত
রাজধানীতে তানহা বিনতে বাশার নামে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় একটি বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, প্রেমিক সায়মনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন তানহা। এ ঘটনায় সায়মনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তানহার পরিবারের সদস্যরা।
তানহার বাবা আবুল বাশার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সায়মন তানহাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। সম্ভবত তার জন্যই তানহা আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের পড়াশোনার সুবাদে সে ঢাকার একটি মেসে অন্য বান্ধবীদের সঙ্গে থাকত। আমরা কুমিল্লায় থাকি। সোমবার দুপুর ১২টায় মেয়ের ফোনে জানা যায়, সে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মন ভালো নেই। সে আমাকে ঢাকায় আসতে বলে। আমি দুপুরে বাসে চড়ে ঢাকায় যাই।
তিনি বলেন, বিকেল ৩টার দিকে মেয়ের ফোন আসে, সে জানিয়েছে বাইরে দুপুরের খাবার খেতে যাবে। সাড়ে ৩টায় ফোনে সে কান্নাকাটি করছিল এবং বলছিল, ‘বাবা, আমার ভুল হলে ক্ষমা করে দিও।’ এরপর থেকে আর তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিকেলে মেয়ের বাসায় পৌঁছে দেখি মেয়ের গলায় ফাঁস।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে ওই ছেলেটা। আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে সে। আমরা বিচার চাই। তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
তানহার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তাসমিম আলম নাগর বলেন, ‘ইউল্যাবের আরেক ছাত্র সায়মনের সঙ্গে দীর্ঘ ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল তানহার। সে যখন কুমিল্লায় কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছিল, তখন তাদের সম্পর্ক শুরু হয়। পরে ওই ছেলে ঢাকায় ইউল্যাবে ভর্তি হয় এবং তানহাকে ঢাকায় আসার জন্য চাপ দিতে থাকে। তানহার বাবা প্রথমে তাকে কুমিল্লার কলেজে ভর্তি করাতে চাইলেও তানহা ঢাকায় ভর্তি হওয়ার জন্য জোর দেন। পরে তার বাবা তাকে এআইইউবিতে ভর্তি করান, কিন্তু তানহা পরে ইউল্যাবে স্থানান্তরিত হয়।
তিনি আরও বলেন, সায়মন প্রায়ই তানহার সঙ্গে সময় কাটাত এবং নিয়মিত তার কাছ থেকে টাকা নিত। এরই মধ্যে সায়মন অন্য মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি চলছিল। দুই মাস আগে সায়মনের বাবা মারা যান এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে সায়মনের জন্য বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তানহা সায়মনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু সায়মন তা অস্বীকার করলে তাদের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়ে ওঠে। সম্পর্কের এই টানাপড়েনে তানহা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সায়মনকে পুলিশ খুঁজছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। তানহার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর বিস্তারিত জানা যাবে।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক জানান, গত সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে স্বপ্নচূড়া ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে তানহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে তানহা আত্মহত্যা করতে পারেন। এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হলেও তা আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা হবে।