ডিবি কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ও পরে ফের গ্রেপ্তার আসামি মো. সুমন মিয়া © ফাইল ছবি
গাজীপুরের শ্রীপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছ থেকে মো. সুমন মিয়া (৩২) নামে এক আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এতে এনসিপির একাধিক নেতার যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে পৌরসভার টেংরা রাস্তার মোড় এলাকায়। হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহতও হন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে ফের গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশের এএসআই শহিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন ব্রিজ এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গাড়িতে তোলার পর থেকেই দুর্বৃত্তরা একাধিকবার হামলা চালায়। বরমী, সাতখামাইর ও সিসিডিবি হয়ে টেংরা পর্যন্ত ধাওয়া চলে। অবশেষে টেংরা মোড়ে তাকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এ সময় হামলায় তিনিসহ এএসআই এমদাদ ও এসআই নাজমুল ইসলাম আহত হন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সুমন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমর্থক। তার বড় ভাই খোকন শেখ এনসিপির উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেও দলটির সদস্য। গাজীপুর জেলা ও মহানগর এনসিপির একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নেতাকর্মীদের থানার আশপাশে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ‘যে যেখানে আছেন সবাই শ্রীপুর থানায় যান। আমাদের এনসিপির একজন সদস্যকে (রাজীব ভাই এর বড় ভাই) গাজীপুর ডিবি পুলিশ ধরে কুপিয়েছে, পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন শ্রীপুর থানায় নিয়ে যাচ্ছে। মামুনসহ সবাই থানায় যাচ্ছে। আশেপাশে যারা আছেন সবাই যান। পুলিশের এত বড় দুঃসাহস কোত্থেকে আসে এটা এবার দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘থানার ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, বাইরে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান রাখতে হবে। কারও গায়ে হাত তুলবেন না। আমাদের অবস্থান জানান দেওয়ায় উদ্দেশ্য। অন্য আরেকটি মেসেজে তিনি লেখেন, এনসিপি কোনও কচুপাতার পানি না। আমার কোনও কর্মীকে অন্যায়ভাবে টাচ করলে কী হবে, সেটা পুরো শ্রীপুরবাসী দেখবে। আমিও সৈনিক, অস্ত্র জমা দিয়ে আসছি, ট্রেনিং না।’
আরেকটি ভয়েস মেসেজে এনসিপির ওই কেন্দ্রীয় নেতা (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) বলেন, ‘থানার ভেতরে কারো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পার্টি অফিস ও শ্রীপুরের চৌরাস্তার আশেপাশের এলাকায় থাকতে হবে। কারণ, বাকী যারা আছেন, তাদের কেউ এখানে কেউ অপরাধী না। এদিকে যদি অবস্থা খারাপ থাকে, আমাদের কোনো সমর্থক নেতাকর্মীকে হেনস্তা করা হয়, আমরা কেউ ওইদিকে যাব না, এমন না। কারো গায়ে একটা ফুলে টোকাও পড়বে না; আমি কথা দিচ্ছি। তবে আশেপাশের এলাকায় সবাইকে থাকতে হবে। কারণ অবস্থান জানান দেওয়ার দরকার আছে। তবে অবশ্যই সুশৃঙ্খলভাবে থাকতে হবে, কোনো গ্যাঞ্জাম করা যাবে না।’ কেউ কেউ বলছেন, এনসিপির ওই নেতা শান্তিপূর্ণ নির্দেশনা দিলেও তা অমান্য করে পুলিশের কাছে জোর করে আসামী নিয়ে যান কয়েকজন নেতাকর্মী।
ঘটনার পরপরই ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়— শ্রীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়েছেন এনসিপি নেতারা। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আলমগীর নামের একজন লেখেন, ‘শ্রীপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে পুলিশ, পুলিশের গাড়িতে কয়েক দফা হামলার পর শেষ পর্যন্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ এর জবাবে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মন্তব্য করেন, ‘এনসিপির সমর্থককে শীর্ষ সন্ত্রাসী বানাচ্ছেন? বাহ!’
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের শিকার ৪১.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, বেশি পরীক্ষায়-শ্রেণিকক্ষে
এ বিষয়ে মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘সুমন মিয়া এনসিপির সমর্থক হলেও তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আসামির বড় ভাই খোকন শেখ এনসিপির সদস্য। তিনি আমাকে জানান, সুমনকে ডিবি পুলিশের সামনে মারধর করছে। আমি সাথে সাথেই বলি, পুলিশের হাতে তুলে দিতে।’ পরে খোকন শেখসহ কয়েকজন তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। থানার আশপাশে নেতা–কর্মীদের জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম কেবল জামায়াত-বিএনপির এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায়।’
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ত্রিমোহনী ব্রিজ এলাকা থেকে সুমনকে আটক করে। পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে দ্রুত অভিযানে নেমে রাতেই সুমনকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’