অপহৃত ঢাবি ছাত্রী বারবার বলছিল, ‘ভাই আমাকে বাঁচান’

ঢাবি ছাত্রীকে অপহরণ করে সব ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারী
ঢাবি ছাত্রীকে অপহরণ করে সব ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারী  © ফাইল ছবি

তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ীর নির্জন কাশবন থেকে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে উদ্ধার করলেন, তার বর্ণনা দিয়েছেন আল-মামুন। গত ২৫ আগস্ট ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করেন পুলিশের সহযোগিতায়। বৃহস্পতিবার ঘটনার বর্ণনা দেওয়া মামুন পেশায় নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী। ওই এলাকায় ৯-১০ বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি।

মামুন জানান, দুপুরের খাবার খেতে দিয়াবাড়ীর বাসায় মোটরসাইকেলযোগে ফিরছিলেন। নির্মাণাধীন ভবনে রড-সিমেন্ট সাপ্লাই দেন তিনি। ১৬ নম্বর সেক্টর পার হওয়ার সময়একটি মেয়ে মোটরসাইকেলের সামনে এসে পড়ল। শুধু বলছিল, ভাই আমারে বাঁচান। এরপর কান্না শুরু করে। এরপরই দেখি, কাশবনের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেলে এক লোক দ্রুত পালাচ্ছে। তাকে দেখিয়ে মেয়েটি বলছিল, ও আমারে তুলে এনেছে। ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছি। সবকিছু নিয়ে গেছে।

আল-মামুন জানান, দিয়াবাড়ী এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে তাঁর কাজ চলছিল। বাসার দিকে যাওয়ার সময় মেয়েটির এ অবস্থা দেখে তুরাগ থানার পুলিশের চালক আসলামকে ফোন করেন। পুলিশের দু'চারজনের সঙ্গে চেনাজানা রয়েছে মামুনের। ফোন পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে এসআই অপূর্বর নেতৃত্বে একটি দল সেখানে যায়। এর পর মেয়েটিকে থানায় নেওয়া হয়। ওই দিন বিকেলেই থানায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বক্তব্য দেন মামুন। পরে জানতে পারেন, মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

ওই ছাত্রীর মা গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়ের ব্যাগে মাদকের কথা বলে পুলিশ পরিচয়ে একজন দিন-দুপুরে তুলে নিল। গলায় ছুরি বসানোর হুমকি দিয়ে সব কেড়ে নিল। স্বাভাবিকভাবেই সে ভয় পেয়েছিল। কে এই শহরে নিরাপদ? অহরহ এ ঘটনা ঘটছে। মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলে এখন লেখালেখি হচ্ছে। তবে সাত দিনেও জড়িতকে গ্রেপ্তারের খবর নেই।

এ বিষয়ে ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, আসামিকে ধরার চ্যালেঞ্জ আমরা নিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও হাতে এসেছে। যে মোটরসাইকেলে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে; তার নাম্বারপ্লেট মেলানোর কাজও চলছে। পরিচয় যা-ই হোক; পার পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, যার মাধ্যমে ঘটনাটি প্রথমে জানা যায়, তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি শুরু থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আরো পড়ুন: ঢাকায় দিনদুপুরে পুলিশ পরিচয়ে ঢাবি ছাত্রীকে অপহরণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যদের অবহিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী, পরিবার, সহপাঠী ও বিভাগের কেউ অবহিত করেনি। একটা সূত্র থেকে কিছু তথ্য এসেছিল। শিক্ষার্থী না বলা পর্যন্ত কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

জানা গেছে. স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তরুণীর সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি এগিয়ে যান। তখন দ্রুত তরুণীর ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালান অপহরণকারী। এরপর ওই ব্যক্তি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ছাত্রীকে উদ্ধার করে।

গত ২৫ আগস্ট দুপুরে দিয়াবাড়ী এলাকার ই-পাসপোর্ট ভবন থেকে ৩০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন তুরাগ থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগটির গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ ছাড়াও ডিবি ও একাধিক সংস্থা এর ছায়াতদন্তে নামে। বিষয়টি নিয়ে শুরুতে কেউ মুখ খুলতে চাননি। রাজধানীতে এক ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনার তথ্য বুধবার জানা যায়।

বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কল্যাণপুরে নামেন তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী। এরপর রিকশা বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় রিকশার গতিরোধ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল, নিজেকেও পুলিশের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর ছাত্রীর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, ‘ব্যাগে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। আপনাকে থানায় যেতে হবে।’

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে ছুটতে থাকেন ওই ব্যক্তি। এরপর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় ছুরি দিয়ে আঘাতের ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেন। তাঁকে নিপীড়নের শিকারও হতে হয়। শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যমকের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ