ঢাবি অধ্যাদেশ-১৯৭৩: এক যুগে অনুবাদ মাত্র এক খণ্ড

ঢাবি
ঢাবি   © টিডিসি ফটো

শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড কিভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হবে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ৭৩-এর বাংলায় অনুবাদের কাজ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজ শুরুর ১২ বছরে তিন খণ্ডের অধ্যাদেশের শুধুমাত্র একখণ্ড অনুবাদ করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই একখণ্ডও সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুর কারণে আটকে রয়েছে। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, ‘যে এক খণ্ড অনুবাদ করা হয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ। যেটুকু দরকার, সেটুকু অনুবাদ করা হয়েছে। এখন তা বই আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।’

জানা গেছে, পুরো অধ্যাদেশটি বাংলায় অনুবাদের জন্য ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিষয়টি অনুমোদন হয় এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎকালীন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমান উপাচার্য) এবং অ্যাডভোকেট এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিনকে অনুরোধ করা হয় এবং ছয় মাসে কাজটি শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়।

ইংরেজিতে লেখা তিন খণ্ডের এই অধ্যাদেশ দেশের প্রধান চারটি বিশ্ববিদ্যালয়- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গাইডলাইন হিসেবে পরিচিত।’ তবে শিক্ষক নিয়োগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ের সৃষ্টি হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নীতিমালা সংবলিত একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণমুখী অধ্যাদেশ প্রণয়নের দাবি ওঠে। এ দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এই চার বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সমন্বয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন’ গঠিত হয়।

শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নীতিমালা সংবলিত একটি আদেশ প্রণয়ন করেন। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ১১-এর আদেশবলে প্রণীত অধ্যাদেশটি ১৯৭৪ সালে কার্যকর করা হয়। তখন থেকে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই অধ্যাদেশের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

এদিকে ইংরেজি ভাষার তিন খণ্ডের এই অধ্যাদেশের বাংলায় অনুবাদের প্রথম কাজটি বাংলা একাডেমীকে দেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক বরাবর অর্থ ছাড় করা হয়। সে সময় এ কাজের জন্য বাংলা একাডেমীকে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২ টাকা দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাংলা একাডেমীর করা সেই অনুবাদ কাজে লাগেনি।

আরও পড়ুন : গুচ্ছের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে যা জানা গেল

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তারা মাত্র একটি খণ্ড অনুবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট জমা দেন। যদিও তারা পুরো অধ্যাদেশটি অনুবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানিয়েছে, এই এক খণ্ড অনুবাদ করার জন্য তাদের দুই লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ জানান, ‘আমরা এক খণ্ড অনুবাদ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের যে পেমেন্ট দিতে চেয়েছিল তা দেননি, এজন্য আমরা এই কাজ আর করিনি।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ‘আমাদের যেটুকু দরকার, সেটুকু অনুবাদ করা হয়ে গেছে। পুরো অধ্যাদেশটি অনুবাদের কোন দরকার নেই। এখন যে আদেশগুলো অনুবাদ করা হয়েছে, তা শুধু বই আকারে প্রকাশের বাকি রয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ