চবিতে সেকেন্ড টাইমের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

চবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগের দাবিতে মানববন্ধন
চবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগের দাবিতে মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগের দাবিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এইচএসসি-২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার (১৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জামালখান প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সেখানে অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগের দাবিতে স্লোগান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের বিষয়টিও তুলে ধরে।

মানববন্ধনে এক শিক্ষার্থী মো: সংগ্রাম জানান, করোনাকালীন সময়ে অটোপাশের কারণে আমরা ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। যার প্রভাব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় ছিল। অটোপাশে ব্যাপক পরিমাণে পাশের কারণে পূর্বের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রতিযোগিতা দিগুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন করোনায় আক্রান্ত এবং পরিবারের সদস্যদের মহামারিতে মৃত্যুর কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে করোনাকালীন সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির বদলে পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরতে তাদের সাজানো গোছানো পড়ার টেবিল ছেড়ে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কলকারখানায় কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। অধিকাংশ মেধাবী মেয়েদের করোনা মহামারিতে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, করোনা মহামারীর কারণে অধিক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রচণ্ড পরিমাণে ভেঙ্গে পড়ে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে বেড়িয়ে কিশোর গ্যাং, মাদক গ্রহণ, জঙ্গিবাদ, আত্মহত্যাসহ নানারকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের এসকল অন্যায় পথের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। কারণ অটোপাশে অতিরিক্ত পরিমাণে পাশের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা একটি সিট পেতে হিমশিম খেয়ে বসে। এর মধ্যে আবার দীর্ঘদিন যাবৎ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার প্রস্তুতির বদলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মহোদয় থেকে শুরু করে চবির সকল কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছিলেন, যদি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং ইউজিসি থেকে অটোপাশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাচ শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায় তাহলে তারা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ কার্যকর করবেন। কিন্তু ইউজিসি এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর চিঠি পাঠিয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ কার্যকর করার জন্য জানানোর পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি কার্যকর করলে অতিরিক্ত পরীক্ষার্থীদের চাপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সামলাতে পারবে না। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তারা দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগ কার্যকর করতে চাচ্ছে না।

তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধিক চাপ সামলাতে না পারার দায় নিতে রাজি নয়। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্য এতোগুলো শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। শিফট বাড়িয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,বিইউপি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষার চাপ সামলাতে পারলে ২১০০ একর জমিতে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশে অবস্থিত বিশাল বড় চবি ক্যাম্পাসে কেনো দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগ কার্যকর করে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাবে? তারা চাইলে বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে।

রিমকাতুল রাশেদ অথৈ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মেধার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সরাসরি সিট চেয়ে বসিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে একবারের বেশি একাধিক বার  উচ্চশিক্ষার অধিকার দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ যখন মানুষ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে তখনই তো দেশের উন্নতি হবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় আমাদের মাতৃসমতুল্য। তিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই নয়।তিনি সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। সেই অভিভাবক কখনোই তার সন্তানদের খারাপ চাইবেন না। তাইতো তিনি আমাদের দাবির প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। তবে দুঃখের বিষয় হলো ভিসির আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাচের দাবির পক্ষে রায় থাকার পরও সেখানে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি চাপ সামলাতে না পারার অযুহাতে আমাদের উচ্চশিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। আমরা এরকম অন্যায় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। ইতোমধ্যে আমাদের মধ্যে অটোপাশ এর মতো একটি অভিশাপ লাগিয়ে আমাদের জীবনে অনেকটা ক্ষতি বয়ে আনা হয়েছে। আমি জানি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকরা যথেষ্ট জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ। দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগ কার্যকরের মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমাণে শিক্ষার্থীদের চাপ সামলে সকল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সুযোগ বাস্তবায়ন করার জন্য তারা অবশ্যই কোনো না কোনো উপায় বের করে নিতে পারবেন।

মানববন্ধনে এইচএসসি-২০ ব্যাচ সকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রকার অজুহাত না দেখিয়ে সকল সমস্যার সমাধান বের করে যতোটা দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি সুযোগ কার্যকরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

 


সর্বশেষ সংবাদ