ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আবেদনপত্রে সেই ছাত্রী রেফারেন্স হিসেবে অভিযুক্ত অধ্যাপকের নামই দেন

নিয়োগে সর্বোচ্চ ফলধারী দু’জনকেই সুপারিশ করা হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ক্ষেত্রে বিভাগের সর্বোচ্চ ফলধারী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা শোনা গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। 

সম্প্রতি এই বিভাগে প্রভাষক পদে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ ফলধারী দুজনকে নিয়োগ বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে নিয়োগের সুপারিশ করলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় গিয়ে আটকে যায়। 

জানা যায়, ওই পদে একজন মেয়ে প্রার্থী নিয়োগ না পেয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর চিঠি দেন।

অন্যদিকে সিন্ডিকেট থেকে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রভাষকের পদের মধ্যে একজন আবেদনকারীর বিবিএ এবং এমবিএ দু‌টো‌তেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। তিনি তার বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রভাষকের পদেরটা স্থ‌গিত করা হয়েছে। 

জানা যায়, গত ৩১ মার্চ ওই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ২৫ এপ্রিল সিলেকশন বোর্ড বসে। সেখানে প্রভাষক পদের বিপরীতে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ওই ছাত্রীসহ ৭ জন ভাইভাতে উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে জাহাঙ্গীর আলম ও সুমাইয়া সিদ্দিকা নামে ২ জনকে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। পরদিন ২৬ এপ্রিল এই সুপারিশ সিন্ডিকেটের সভায় উঠালে ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপারিশটি স্থগিত করা হয়।

এদিকে আবেদনের কাগজপত্রে দেখা যায়, সিলেকশন বোর্ড থেকে সুপারেশ করা জাহাঙ্গীর আলম ও সুমাইয়া সিদ্দিকার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফল (সিজিপিএ) যথাক্রমে ৩.৯০ ও ৩.৯৬ এবং ৩.৯৪ এবং ৪.০০। অন্যদিকে যৌন হয়রানি অভিযোগ আনা ওই প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফল ৩.৮২ ও ৩.৮৫।

তাছাড়া সিলেকশন বোর্ডের ভাইভাতে অংশ নেওয়া বাকিদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলও যৌন হয়রানি অভিযোগ আনা ওই প্রার্থীর চেয়েও বেশি।

এ বিষয়ে ভাইভাতে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী বলেন,  সিলেকশন বোর্ড থেকে সুপারেশ করা দুইজনের ফল সবার চেয়ে বেশি। এ কারণে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে সেটি বলা যাবে না।

এদিকে, শিক্ষক নিয়োগে যেই আবেদনপত্র রয়েছে সেখানে যৌন হয়রানি অভিযোগ আনা সেই ছাত্রী রেফারেন্স হিসেবে অভিযুক্ত ওই অধ্যাপকের নামসহ বিভাগের দুইজনের নাম যুক্ত করেছেন। সেই আবেদনপত্রের ১৮ নম্বর পয়েন্টে বলা আছে, “পরিচিত কিন্তু জ্ঞাতি বা বৈবাহিক সম্পর্কে যুক্ত নয় ও যাদের নিকট হইতে আবেদনকারী গবেষণমূলক এবং অন্যান্য কাজকর্ম সম্বন্ধে জানা যাইতে পারে এমন দুইজন ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও ফোন নং....।”

২০১৮ সালে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একবার অভিযোগের পর ২০২২ সালে এসে নিয়োগের আবেদনপত্রে কেন রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, জানতে চাইলে অভিযোগ করা ওই ছাত্রী বলেন, উনি যেহেতু বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সিলেকশন বোর্ডে থাকবেন তাই উনার নামটা দিয়েছি। এমন তো সবাই দেয়। তাছাড়া উনিতো আমার বিভাগের শিক্ষক। উনার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি কিংবা সাক্ষাৎ করেছি, বিষয়টি এমন না।

আরও পড়ুন: নিয়োগ না পাওয়ার পর শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছাত্রীর

এদিকে বাকি প্রার্থীদের আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, আবেদনপত্রের রেফারেন্সের জায়গায় অনেকেই ওই অধ্যাপকের নাম উল্লেখ করেনি। এমনকি সুপারিশপ্রাপ্ত দুইজনের মধ্যে একজনও সেটা করেনি।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যৌথভাবে বিবিএ এবং এমবিএ দু‌টো‌তেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন অভিযুক্ত ওই ছাত্রী এবং তার ব্যাচের আরেকজন শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ওই শিক্ষার্থী বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ভাইভা বোর্ডে ছিলেন না অভিযুক্ত এই অধ্যাপক। যিনি বর্তমানে বিভাগটির চেয়ারম্যনের দায়িত্ব পালন করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ