বাবাহারা অসুস্থ মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন হিমেল

হিমেলের রক্তমাখা স্কেচ
হিমেলের রক্তমাখা স্কেচ  © সংগৃহীত

মাহবুব হাবিব হিমেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের রাস্তায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি।

নিহতের সহপাঠীরা জানান, হিমেলের বাড়ি নাটোরে। সে ছিল তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো ভাইবোন ছিল না তার। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যায়। তার মাও শারীরিকভাবে অসুস্থ অনেক আগে থেকেই। 

আরও পড়ুন: আমি ছিটকে পড়লেও ট্রাকটি হিমেলের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়

হিমেলের ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে দেখা যায় বন্ধু, লেখাপড়ার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজ করতেন তিনি। ফেসবুকে তার পরিচয়ে লেখা রয়েছে সহ-সভাপতি, বাঁধন, শহীদ শামসুজ্জোহা হল ইউনিট, রাবি জোন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক। বাঁধন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের অন্যতম একটি সংগঠন।

হিমেলের টুপি, মাস্ক, রক্তাক্ত সেই জায়গায়। যেখানে পরে ছিল নিথর দেহ।

মাহমুদ হাসান হিমেল নিহতের পর থেকে ফেসবুকে তাকে ট্যাগ করে সহপাঠী ও সতীর্থরা পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করে আর্তনাদ করছেন। ফেসবুকে হিমেলের বাল্যবন্ধু পরিচয় দেওয়া ফয়সাল মাহমুদ নামের একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘আমার ছোটবেলার বন্ধু। সে আমাকে এ বায় বলে ডাকত। যাচ্ছি তার সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে। আমি যখন প্রথম খবরটি শুনলাম, মনে হচ্ছিল হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা সম্ভবত অন্য কোনো হিমেল হবে। কিন্তু না, আমার ধারণাটা ভুল ছিল। এটাই প্রমাণ হলো যে আমাদের বন্ধু আর নেই। আসলেই নাই। সে ছিল তার বাবা–মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো ভাইবোন ছিল না তার। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যায়। হিমেলের আম্মুও শারীরিকভাবে অসুস্থ অনেক আগে থেকেই। একমাত্র হিমেলকে নিয়েই তিনি বেঁচে আছেন বলা চলে। খবরটি শোনার পর আমার তখন হিমেলের আম্মুর কথা মনে পড়ল। সে যখন এই খবরটা পাবে, তার কী অবস্থা হবে? এইটা ভাবতেই ভয় লাগছে। যা–ই হোক, ভালো থাকিস বন্ধু।’

হিমেলের ফেসবুক ওয়াল ছেয়ে গেছে সতীর্থদের শেয়ার করা রক্তমাখা স্কেচ আর স্মৃতিকথায়। তাদেরই একজন মুশাররফ হোসাইন তার দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শেষে লিখেছেন, ‘ভাই আজ সত্যি সত্যিই নিজের সব রক্ত দিয়ে রাবি ক্যাম্পাস রঞ্জিত করে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন ওপারে। এই রক্তমাখা ক্যাম্পাসে আমি কী করে হাঁটব!’

হিমেলের রক্তমাখা স্কেচ সংযুক্ত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কনক পিকে লিখেছেন, ‘আহা! হিমেল। আমার ফেসবুক তালিকার সর্বশেষ বন্ধু। আতঙ্কে আমার ছেলে কণাদের ঘুম আসছে না। ওর মাকে রাস্তায় হাঁটতে দেবে না আর। হিমেলের মায়ের কেমন লাগছে?’

ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন একটি একাডেমিক ভবনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের চাপায় নিহত হন হিমেল। তার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বুলবুল নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘হিমেলের মা যদি জিজ্ঞেস করেন, আমার হিমেল বাবার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে কবরে শুইয়ে দিই, কেউ কি মাথাটা এনে দিতে পারবেন?’

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। একইসঙ্গে বুধবারের মধ্যে হিমেলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার জানিয়েছেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক শিক্ষার্থী রিমেলের চিকিৎসার সকল খরচও প্রশাসন বহন করবে।


সর্বশেষ সংবাদ