অছাত্ররাও ঢাবির হলে, ফের আবাসন সংকটের শঙ্কা

ঢাবির আবাসিক হল
ঢাবির আবাসিক হল  © ফাইল ফটো

দীর্ঘ ১৮ মাস পর মঙ্গলবার খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল। প্রথম পর্যায় অর্নাস শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষাথীদের জন্য এক ডোজ টিকা গ্রহণ ও বৈধ ছাত্র হওয়ার সাপেক্ষে হলে উঠার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইভাবে অনার্স ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ এবং ৩য় বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা আগামী ১০ অক্টোবর থেকে উঠতে পারবে।

তবে হল খোলার প্রথম দিনেই ছেলেদের প্রায় প্রতিটি হলেই ছাত্রত্ব শেষ করা শিক্ষার্থীরাও নিজেদের আগের কক্ষে উঠে গেছেন বলে জানা গেছে। ফলে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ছেলেদের হলে অছাত্ররা বেশি পরিমাণে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অবস্থান বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এর ফলে নিজেদের ‘রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে’ হলে থাকছেন সাবেক এই সাকল শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে অনেকেই আবার ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রফেশনাল মার্স্টাস, এমফলি বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে, বাসা ভাড়ার খরচ বাঁচিয়ে নির্বিঘ্নে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হলে থাকনে ‘অরাজনৈতিক সাবেক শিক্ষার্থীরা’।

হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই মার্স্টাসের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, এমন শিক্ষার্থীরাও হলে উঠতে শুরু করেছেন।

অন্য ছাত্রসংগঠনেরগুলোর অভিযোগ, দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতেই অছাত্রদের হলে রাখে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির সিনিয়র পদগুলোতে স্বভবতই সিনিয়র নেতাদের পদায়ন করতে হয়। ফলে চাইলেও হলের বাহিরে থেকে রাজনীতি করা অনেকটাই সম্ভব হয়না।

ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি একটু কঠোর হলে আবাসিকত্ব শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতো। কিন্তু প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের পুুতুলে পরণিত হওয়ায় তাদের মর্জি মত সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই সাধারণ ছাত্ররা থাকবে। এক্ষেত্রে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে, কারা বৈধ ছাত্র হিসেবে হলে থাকবে, আর কারা হলে থাকবে না। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

দলের অছাত্র যেসব নেতাকর্মী হলে থাকছেন, তাদের হলে না থাকার ব্যাপারে ছাত্রলীগের কোনো নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয় সাংগঠন থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেওয়া হয়নি। এখন অনেকেই মাস্টার্স বা পিএইচডি করছে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মানদণ্ডে ধরে নেবে তাদের ছাত্রত্ব নেই?

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, মাস্টর্সের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আবাসিকত্ব শেষ হয়ে যায়। আর এমফিল বা পিএইচডির শিক্ষার্থীরা একটি আবাসিক হলের অধীনে ভর্তি হলেও তাদের আবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়মটি ‘ক্লিয়ার’ করেনি বলে দাবি করেন সনজিত চন্দ্র দাস।

এদিকে, গণরুম বন্ধ করতে হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের হল রাখা যাবে না বলে মনে করেন অমর একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসতিয়াক এম সৈয়দ। তিনি বলেন, হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের রোস্টার ভিত্তিতে ফ্লোর পরিদর্শনের দায়িত্ব আছে। এখন এটি বেশি করা হবে। পর্যাক্রমে অছাত্রদের হলে না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি এবং বিজয় একাত্তরের হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, আমরাতো হল প্রশাসনে আছি। আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের নিশ্চয় বোঝাপড়া হবে। আমরা গেট খুললে তো উঠবে নাকি? ওরা নিশ্চয় আমাদের সাথে কথা বলবে। যদি আমাদের এখানে আসে আমরা ওদের বোঝানোর চেষ্টা করবো, আমরা তো আর পুলিশ না, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অংশ। আমাদের হাতে কলম আছে, নীতি আছে, আদর্শ আছে সেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের আমরা সবসময় ম্যানেজ করি। এবারও করতে পারবো আশা করি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট নিয়ম নীতিমালার মধ্য দিয়ে চলে। এটা গ্রামীণ কোনো জীবন ব্যবস্থা না, এটা একটা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের কিছু চরিত্র বৈশিষ্ট্য থাকে, সেটা আমাদের যতই কষ্ট হোক আমরা সেটা মেনে নিব।

মঙ্গলবার হল খোলার প্রথম দিনেই বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় সাবেক শিক্ষার্থী বা অছাত্রদের মধ্যে যারা হলে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এটি দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বিষয়। এটির একটি ভালো ও সম্মানজনক সুরাহার জন্য সকলের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সিনিয়র শিক্ষার্থীদের এটি একটি দায়িত্ব। সবাই সহযোগিতা করলে সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধান আসবে। একইভাবে গণরুম সমস্যা সমাধানের জন্যও ‘ক্রিয়াশীল ছাত্রসংঠন’সহ সকলের সহযোগিতা চান উপাচার্য। 


সর্বশেষ সংবাদ