অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান, ২৪ মে ক্যাম্পাস না খুললে আন্দোলন
- ইলিয়াস শান্ত
- প্রকাশ: ০৮ মে ২০২১, ০৪:৩৫ PM , আপডেট: ০৮ মে ২০২১, ০৭:১৩ PM
অনালাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর মত বাস্তবতা দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই দাবি করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত’ প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতেই নতুন এ সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা। তাই এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার দাবি তাদের।
আজ রবিবার ফেসবুক গ্রুপ ‘অবিলম্বে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে’-এর মডারেটর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানে হয়েছে। এতে চলতি মে মাসের মধ্যে হল-ক্যাম্পাস খুলে না দেয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি, ইউজিসি অনলাইনের পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শর্ত সাপেক্ষে নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে অনলাইনে বর্ষ সমাপনী বা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করতে পারে। আমরা বাস্তবতা বিবর্জিত ও উচ্চশিক্ষা ধ্বংসকারী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।
পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে দুমাস
‘‘অনালাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর মত কোন বাস্তবতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই। আমরা সকলেই অবগত আছি, আমাদের দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল যা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশকে অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব না। আবার শিক্ষকরাও অনলাইনের সকল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ নন।’’
এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছে উপযুক্ত ডিভাইসের অভাব, ইন্টারনেট খরচ বহন করার সক্ষমতা সকলের নেই। যেখানে অনলাইন ক্লাসগুলোয় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনুপস্থিত থেকে যায়, সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ মে) সাত শর্তে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষার্থী যদি অনলাইনে পরীক্ষা দিতে না চায়, সেক্ষেত্রে তাদের চাপিয়ে দেয়া যাবে না বলে কমিশনের শর্তে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনালাইনে পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে এখনো জানা না গেলেও যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ আগে থেকেই এ কার্যক্রমে বাইরে রয়েছে; সেক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি যাইহোক এটা এ বাস্তবতাই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতেই অনলাইন পরীক্ষার নতুন এ পদ্ধতির চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে অনলাইন ক্লাসের বাইরে যেরকম একটি বড় অংশ পড়ে ছিল, ঠিক একইভাবে অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একটি অংশ বাদ পড়ে যাবে।
এতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আমাদের দাবির কথা সরকারের কাছে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্য ভার্চুয়াল প্রতিবাদ চালু রাখবো। যদি মে মাসের মধ্যে হল-ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা-কার্যক্রম স্বাভাবিক করা না হয় তাহলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে সরাসরি মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে গ্রুপ অ্যাডমিন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জিকে সাদিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউজিসি অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে নিদর্শনা দিয়েছে সেটা তারা মাঠপর্যায়ের স্টাডি করে দেয়নি। দেশের ইন্টারনেটের গতি, দাম, সকলের ডিভাইস প্রাপ্তি ও শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতাসহ নানা কারণে ইউজিসির এ অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার অনেক সময় পেয়েছে। তারা চাইলে এতোদিন শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে পারতো। তারা সেটা না করে কেবল মুখেই বলেছে তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের বিষয়ে খুব সতর্ক। এদিকে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে আছে। এই পরিস্থিতি আর তারা মেনে নেবে না।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাকিব না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আয়োজনে অনেকগুলো পদ্ধতির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওপেন বুক এক্সাম’ পদ্ধতিও। এ বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কৌশলপত্রটি জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাবির অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতির এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, ‘আমরা যারা শেষ বর্ষে আছি, আমাদের কিন্তু পরীক্ষা নিলেই আমরা মোটামুটি চাকরির দিকে যেতে পারব। আমাদের বিভাগে ৮ম সেমিস্টারে মোটামুটি ২০ দিনের রুটিনেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। এই পরীক্ষা স্যারদের যেভাবে ইচ্ছা নিক, কিন্তু নিতে হবে। আমরা যারা শেষ বর্ষে আছি তাদের জন্য পরীক্ষা হওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’