বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ: রাবিতে ভর্তির যোগ্যতা ও করণীয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

গবেষণা ও শিক্ষার গুনগত মান, আভ্যন্তরীণ পরিবেশ, আবাসিক ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য এবং যোগাযোগ সুবিধার বিচারে দেশের সুনাম ধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ১৯৫৩ সালে মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী নিকট ‘চির সবুজ ক্যাম্পাস’র উপাধি পেয়েছে ৭৫৩ একরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। একইসাথে ক্যাম্পাসের বহুল জনপ্রিয় তীর্থ স্থানসমূহ যেমন, প্যারিস রোড, সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্য, টুকিটাকি চত্বর ও শহীদ মিনার চত্বরের মতো বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো নিমেষেই শিক্ষার্থীদের নজর কাঁড়ে!

তাছাড়া সর্বদা ক্যাম্পাসের আড্ডা ও উৎসের আমেজ বিরাজ করায় দেশের হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মনে এক স্বপ্নের নাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস! যেখানে প্রতি বছর দেশের লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে ‘ভর্তি-সুযোগ’ হাতছানি দেয় তাদের সফলতার দারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে। তবে আর দেরি না করে চলুন জানা যাক ‘চির সবুজ’ এ ক্যাম্পাসের ইউনিট ও ভর্তি যোগ্যতা সম্পর্কে:

বিগত বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি পরীক্ষায় এনেছে ব্যাপক পরিবর্ত। যেখানে ইউনিটের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পরিবর্তীত হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিও। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া বিজ্ঞাপ্তি অনুসারে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিন ইউনিটে যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা।

ইউনিট পরিচিতি:

ইউনিট- এ : কলা অনুষদ , আইন অনুষদ, আইন অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, চারুকলা অনুষদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

ইউনিট- বি : বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট।

ইউনিট- সি : বিজ্ঞান অনুষদ জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ কৃষি অনুষদ এবং প্রকৌশল অনুষদ

ইউনিট ভিত্তিক যোগ্যতা:

এ- ইউনিট (মানবিক বিভাগ): মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং একই সাথে বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীরা এ-ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি/ সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ সহ মোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হয়। মোট আসন-২০১৯ টি।

বি-ইউনিট (বাণিজ্য বিভাগ): বাণিজ্য শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং একইসাথে বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীরা বি-ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৭.৫০ থাকতে হবে। মোট আসন ৪৫৫টি।

সি-ইউনিট (বিজ্ঞান বিভাগ): বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র সি-ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৮.০০ থাকতে হবে। মোট আসন- ১৫৪৯ টি।

এইসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।(এবার আরো বৃদ্ধি করা হতে পারে)। এছাড়া জিসিই ও-লেভেল পরীক্ষায় পাঁচটি বিষয়ে এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় অন্ততঃ দুটি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং উভয় লেভেলে মোট সাতটি বিষয়ের মধ্যে চারটি বিষয়ে কমপক্ষে বি-গ্রেড এবং তিনটি বিষয়ে কমপক্ষে সি-গ্রেড পেতে হবে।

পরীক্ষা পদ্ধতি ও নাম্বার বন্টন: ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমসিকিউ ৬০ নম্বর এবং লিখিত (এসএকিউ) পরীক্ষার নম্বর ৪০। যার মোট সময় ১০৫ মিনিট নির্ধারিত। এমসিকিউ পরীক্ষার সময় হবে ৫০ মিনিট, ১৫ মিনিট এমসিকিউ উত্তরপত্র গ্রহণ, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র বিতরণ এবং অবশিষ্ট ৪০ মিনিট লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত। এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৬০টি প্রশ্ন এবং এসএকিউ পরীক্ষার জন্য ২ নম্বরের ২০টি প্রশ্ন থাকবে।

মেধাক্রম নির্বাচন:এমসিকিউ পরীক্ষার ফলাফলের মেধাক্রমের ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিটের আসন সংখ্যার ১০ গুন পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের (আসন সংখ্যার ১০ গুন) এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যােগফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত ফলাফলের মেধাক্রম অনুযায়ী পরীক্ষার্থীরা ভর্তির সুযােগ পাবে।

বিশেষ কোটায় আসন সংখ্যা: ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি – ৫০টি (প্রতি বিষয়ে সর্বোচ্চ ২টি ), শারীরিক প্রতিবন্ধী – ৫০টি (প্রতি বিষয়ে সর্বোচ্চ ২টি), মুক্তিযোদ্ধা– প্রতি বিষয়ের আসন সংখ্যার ৫ শতাংশ, পোষ্যকোটা – প্রতি বিষয়ের আসন সংখ্যার ৫ শতাংশ, বিকেএসপি – শারীরিক শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগের আসন সংখ্যার ২০ শতাংশ নির্ধারিত।

কী করতে হবে দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠে ভর্তি হতে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ৪০ হাজার রাবি শিক্ষার্থীর অনেকে মনে করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে স্পাইডার ম্যান, সুপারম্যান কিংবা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক হতে হয় না! ৭৫৩ একরের একজন রাবিয়ান হতে তুমি নিজেই যথেষ্ট। যার একমাত্র হাতিয়ার নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।

প্রতিবছর হাজারো গোল্ডেন জিপিএ-৫ ধারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার হলে বসে। কিন্তু ঘন্টা শেষে শুধুমাত্র তারাই নিজের নামের সাথে রাবিয়ান, ঢাবিয়ান ও জাবিয়ান টাইটেলগুলো লাগাতে পারে যারা সত্যি সত্যিই মনে করে যে, আমি আমার যোগ্যতা বলে যতটুকু পরিশ্রম করেছি তার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন আমার প্রাপ্য- হোক সেটা সর্বশেষ কিংবা সর্বপ্রথম!

উল্লেখ্যযোগ্য শিক্ষার্থী জিপিএ-৩ ও জিপিএ-৪ নিয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। মনে রাখবে- সবার মতো হয়ে নয়, দুনিয়াতে তারাই কিছু করেছে যারা ব্যতিক্রম কিছু চিন্তা নিয়ে এগিয়েছে! সুতরাং ‘বি কনফিডেন্স-নেভার গিভ আপ’।

রাবি ভর্তি যুদ্ধে টিকতে কিছু সহায়ক বইয়ের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদ মেনন বলেন, প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীকে অবশ্যই তাদের পাঠ্যবই সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখতে হবে। এছাড়া রাবির বিগত ১০ বছরের ব্যাখ্যাসহ প্রশ্নগুলো পড়ার পাশাপাশি কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন হয় সেটা বের করতে হবে। এছাড়া টোফেল, বিসিএস প্রশ্নব্যাংক, এমপিথ্রি, প্যানাসিয়া, জয়কলিসহ কেউ কোচিং কররে নিজ নিজ কোচিং সেন্টারের দেয়া নোট ও সাজেশন অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যেটা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই একজন শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে সক্ষম।

তাছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য রাবি চ্যালেঞ্জ সাজেশনগুলো বিগত বছর ধরে অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। যেগুলো রাবির জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্য করতে সক্ষম বলে জানান এই শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, রাবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এখনো প্রকাশিত হয়নি। বিগত বছরের বিজ্ঞপ্তি আনুসারে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুপ্ত বাসনা উর্বর করার নিমিত্তে দিক-নির্দেশনা এটি। নতুন সার্কুলারটি প্রকাশের সাথে সাথে পূর্ণাঙ্গ ভর্তি পরীক্ষা ও করনীয় সম্পর্কে অবিহিত করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ