জোরেশোরেই চলছে জাবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

জাবি উন্নয়ন প্রকল্পের মডেল
জাবি উন্নয়ন প্রকল্পের মডেল  © টিডিসি ফটো

২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। দিনটি ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই আনন্দের। কারণ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রকল্পটি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হরিয়ে বিষাদে রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গাছ কর্তন, হল স্থানান্তর, দুর্নীতি এবং উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়টি আলোচনা থেকে হারিয়ে যায়।

তবে বর্তমানে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে তিনটি মেয়ে ও তিনটি ছেলেদের আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

নির্মাণাধীন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ১০ তলার বিশিষ্ট এক হাজার আসনের তিনটি ছাত্রী হল ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ভবনের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে, আন্দোলন ও নানাবিধ কারণে পিছিয়ে থাকা ছাত্রদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট তিনটি হল ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ভবনের প্রায় ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক হাজার শ্রমিক রাতদিন কাজ করে চলেছে প্রকল্পটিতে।

প্রকল্পের সাথে যুক্ত প্রকৌশলীরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যেই প্রশাসনের কাছে হল হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

জরুরি প্রয়োজনে বন্ধ ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, হল নির্মানের অগ্রগতি আমাদের সকল সংশয় দূর করছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা নতুন হল বুঝে পাবে। এতে আমাদের শিক্ষাজীবনের আবাসন সমস্যার দুর্বিপাক হতে রক্ষা পাব।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের কাজ আশানরুপ গতিতে এগিয়ে চলেছে। বুয়েটের খ্যাতনামা প্রকৌশলীরা কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। ভবিষ্যতে প্রকল্পের কাজ বড় ধরনের বাধাগ্রস্থ না হলে নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।

মহামারির মধ্যেও কাজের গতি ধরে রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কিছু ক্ষেত্রে কাজের সুবিধা হচ্ছে। আবার একই সাথে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে। তাই প্রতিটি কম্পোনেন্টে একজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন যিনি শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকেন। ফলে কাজে কোন ধরনের সমস্যা হয়না।

তিনি জানান, হলগুলোতে থাকবে নানান ধরনের সুবিধা। প্রতিটি রুমে ইন্টারনেট ব্যবস্থা, তিন কক্ষ বিশিষ্ট টিভি রুম, জাকসু প্রতিনিধিদের জন্য এসি কক্ষ, কার পার্কিং, জিমনেসিয়াম এবং লিফট সহ পুরো ভবনের ফেয়ার ফেস।

প্রকল্পের অগ্রগতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সকলের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রথম নারী উপাচার্য যা চাইবে, তারা তা-ই দেবে। এরপরই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি করে একটি মডেল শিক্ষায়তন হিসেবে জাবিকে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা হাতে নিই।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেই আমরা একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটা হবে পরিপূর্ণ একাডেমিক সিটি।

উপাচার্য আরও বলেন, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিম্ববিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এতে দেশের উচ্চশিক্ষার চাহিদার বিপরীতে আরো অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব হবে।

জাহাঙ্গীরনগরের জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অতিথি পাখির ফ্লাইং জোন অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আহ্সানউল্লাহ মজুমদারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম সংশোধিত প্ল্যান তৈরি করে। এর আগে ক্যাম্পাসের কোন অংশে কী ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হবে তা স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মূল মাস্টারপ্ল্যান গাইডলাইন ছিল। অতীতে বিভিন্ন সময় তা অনুসরণ না করেই যততত্র ভবন ও স্থাপনা তৈরি হয়।

এ বিষয়ে সংশোধিত পরিকল্পনা তৈরির টিম লিডার সহযোগী অধ্যাপক শেখ আহ্সানউল্লাহ বলেন, আমরা জাহাঙ্গীরনগরের মাস্টারপ্ল্যান পর্যালোচনা করেছি। আগে যত ভবন হয়েছে তার মধ্যে তিন-চারটি বাদে কোনো ভবনই মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। সরকার চাচ্ছিল প্রতিটি হল ২০ তলা হোক। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় ১০ তলাবিশিষ্ট হল করার বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। মূল মাস্টারপ্ল্যানকে স্পিরিট হিসাবে নিয়েই আমরা নতুন প্ল্যান করেছি। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি করা যেতে পারে।

এদিকে, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ক্যাম্পাসে ভারী যান চলাচলের ফলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক অবনতি হলে দ্রুততার সাথে দুই হাজার মিটার রাস্তা সংস্কারের উদ্যেগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রথম ধাপের ছয়টি আবাসিক হল ছাড়াও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আরো ১৭টি ভবন নির্মান হবে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, হাউস টিউটরদের বাসভবন, প্রভোস্টদের আবাসিক কমপ্লেক্স, শিক্ষক, অফিসার, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য আবাসিক টাওয়ার, গেস্ট হাউস-কাম গ্র্যাজুয়েট রিসার্চার হাউস, জীববিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, কলা ও মানবিকী অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের আনুভূমিক সম্প্রসারণ, লেকচার থিয়েটার।

এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্র, নতুন লাইব্রেরী ভবন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চের উন্নয়ন, ছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠ, গ্যাস, বৈদ্যুতিক ও পানির লাইন সম্প্রসারণ, শহীদ রফিক-জব্বার হল নির্মাণ সমাপ্তকরণ, জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সংশোধন, রাস্তা, মেডিকেল সেন্টারের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা, ৩২ সিটের একটি মিনিবাস, আসবাবপত্র ও পিকআপ কেনা।


সর্বশেষ সংবাদ