রাবির গেস্টহাউস নির্মাণের নামে ১০ কোটি টাকা নয়ছয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউস তৈরির জন্য রাজধানীতে ‘জমি ক্রয়ে’ ব্যয় করা টাকা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্প বাবদ ১০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও তাতে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। আইন উপদেষ্টার সুপারিশ উপেক্ষা করেই তখনকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ অনিয়ম করেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে রাবির সিন্ডিকেট সভায় ঢাকায় গেস্টহাউস নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। জমি নির্বাচনসহ প্রকল্পটি দেখভালে উপ-উপাচার্য সারওয়ার জাহানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন উপাচার্য। কিন্তু প্রকল্পের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, জমি ক্রয়ের নামে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সারওয়ার জাহান। তবে তারা তা অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটিও আইনি পদক্ষেপ নিতে দেড় বছর আগে সুপারিশ করে। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহবায়ক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর বলেন, ‘কমিটি এ প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি পেয়েছে। জমি বা ইমারত কিনতে যেসব নিয়ম মানতে হয়, কিছুই মানা হয়নি। একজনের জমি কিনলেও একাধিক ব্যক্তির মালিকানা রয়েছে।’ প্রকল্পের সবকিছুই ত্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান দায়িত্ব গ্রহণ করলে ওই বছরের ২৫ জুলাই সিন্ডিকেটের ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ সভায় অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তারা অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা রয়েছে উল্লেখ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদকে ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায় বর্তমান রাবি প্রশাসন। কমিটি ১০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল ও ফেরত নিতে এবং আইন উপদেষ্টার পরামর্শ সত্ত্বেও জমি ক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে।

সূত্র জানায়, গেস্টহাউস নির্মাণের দরপত্র আহবান করে প্রথমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও সেটি বাতিল করে ২০১৬ সালের ২৩ জুন পুনরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে ‘এলডোয়ার্ডো প্রপার্টিজ ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও ‘মেট্রো হোমস’ ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় অংশ নেয়। তবে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ বাতিল করে জমির মালিক খালিদ মাহমুদের কাছ থেকে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি ধানমন্ডি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সাব-কবলা দলিলের (নম্বর ১৩৩১/১৬) মাধ্যমে ক্রয় করেন।

দলিলে তখনকার কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এন্তাজুল হক স্বাক্ষর করেন। ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তের রেজুলেশনে জমির মূল্য ১১ কোটি টাকা ও ভবন নির্মাণে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়। এর ৩৬ দিন পর বিক্রেতার সঙ্গে কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার ‘জমি ক্রয়-বিক্রয় ও ভবন নির্মাণ চুক্তি’ করেন।

একই বছরের ২৯ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় টেবিল এজেন্ডা হিসেবে ওই চুক্তিপত্র অনুমোদন করিয়ে নেয় প্রশাসন। জমিতে নতুন ভবন নির্মাণে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও দলিলে উল্লিখিত তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য গোপন রাখা হয়। সিন্ডিকেটে মূল্য ১১ কোটি টাকা দেখানো হয়। এছাড়া তিন দফায় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করার বিষয়টিও জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি মেনেই এটি করা হয়। এ কাজের জন্য কমিটি করা হয়েছিল। তাদের সুপারিশে সিন্ডিকেট সেটি অনুমোদন দেয়।’ এসময় আর্থিক অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, ‘এটি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। তা হলে দুদকের তদন্ত করার কথা। তবে তদন্ত করছে কিনা, জানি না। কিছু পেলে তারা মামলা করবে।আমরা দুদককে সহযোগিতা করছি।’

এ বিষয়ে দুদকের রাজশাহীর উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ঢাকায় তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগ জমা দিয়েছে। করোনাকালে বিষয়টি এগোয়নি।’ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।


সর্বশেষ সংবাদ