১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্তসাপেক্ষে ফিরছে পোষ্য কোটা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি সম্পাদিত

বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ পেয়ে পাস করা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা ভর্তির সুযোগ পাবেন। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

মাঈন উদ্দীন বলেন, বেশ কিছু শর্তে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এই সুবিধা কেবল ৪০ পেয়ে পাস করা শিক্ষার্থীরাই পাবে। তবে শিক্ষকের সন্তান নিজ বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। আবাসিক সুবিধা পাবে না। ভর্তি কমিটির সভায় এমন কিছু শর্তে এ বছরের জন্যই কেবল এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পরের বছর ভর্তি কমিটি আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ছাড়া আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথম বর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশক্রমে শর্তসাপেক্ষে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুত্র-কন্যা ভর্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। 

প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির শর্তসমূহ হচ্ছে, কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঔরসজাত/গর্ভজাত সন্তান এই ভর্তির সুযোগ পাবে; ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের জন্য বিজ্ঞাপিত যোগ্যতা এবং শর্ত এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে; মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে;     ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা অনুসরণ করা হবে; ভর্তির আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্ধারিত শর্তাবলিসহ অবশ্যই ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি ভাঙার গুঞ্জন, আছে সংশয়ও

কোনো বিভাগে দুজনের অধিক ভর্তির সুযোগ থাকবে না; কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানকে তার কর্মরত বিভাগে ভর্তি করানো যাবে না; এ সুবিধার আওতায় নিজেদের মধ্যে ‘অটো মাইগ্রেশন’ ছাড়া শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তনের অন্য কোনো সুযোগ থাকবে না; ভর্তির ক্ষেত্রে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো অভিভাবকের অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে অঙ্গিকারনামায় উল্লেখ করতে হবে; এ সুবিধার আওতায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আবাসিক হলে সিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে না।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন যাবত প্রচলিত কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পুত্র-কন্যাদের ভর্তির প্রক্রিয়াকে শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বৈষম্যমূলক ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী চেতনার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানায়। তারা এও জানায় যে, অতীতে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর না পাওয়া সত্ত্বেও ভর্তির নজির আছে, যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির ধারাকে ক্ষুণ্ন করে। এ ছাড়া কিছুক্ষেত্রে অভিভাবকের বিভাগে ভর্তি হয়ে পুত্র-কন্যারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করে বলেও তারা অভিযোগ করে।

বিপরীতে, পুত্র-কন্যাদের ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা’ হিসেবে ভর্তির সুযোগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা আরও বলে যে, দীর্ঘদিনের প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত এই সুবিধা আকস্মিকভাবে বন্ধ করা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও অসমীচীন।

শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি সম্পর্কে তারা বলেন, ২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড-চলাকালে তালাবদ্ধ করে। এসময় তারা কোনো খাবারও প্রবেশ করতে দেয়নি। উপ-উপাচার্যদ্বয়, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবা গ্রহণে আগত ব্যক্তিবর্গ প্রায় ১৩ ঘণ্টা প্রশাসন ভবন-১-এ অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: এবার অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে ১৭ ডিসেম্বর

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা এবং তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনার সুযোগ না দিয়েই সে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে। একই সময়ে জাহাঙ্গীরনগর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সুবিধা বাতিল/স্থগিত করলেও পরবর্তী সময়ে যথাসময়ে তারা এটিকে পরিমার্জিত রূপে পুনর্বহাল করে। পূর্ব থেকে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সুবিধা প্রচলিত ছিল তার কোনোটিই বন্ধ করা হয়নি। 

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা আরও উল্লেখ করেন যে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুবিধা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বন্ধ করাও এক ধরনের বৈষম্য। তাছাড়া, সম্প্রতি ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরকারি স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা অফিসে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও বিভাগীয় সুবিধা হিসেবে সরকার ইকিউ কোটা (এডুকেশন কোটা) চালু করেছে। এ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধাকে চালু রাখার জন্য ক্রমাগত দাবি জানাতে থাকেন। এর অংশ হিসেবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এধরনের সুবিধা প্রদানের বিরোধিতা করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও সমাবেশ করছে। ফলে এক অনাকাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রতি আগ্রহ ব্যক্ত করে।

আরও পড়ুন: কম্পিউটার অপারেটর থেকে অতিরিক্ত পরিচালক, ইউজিসি চেয়ারম্যানের পিএসের পদোন্নতিতে অনিয়ম

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা করে বিরাজমান পরিস্থিতি নিরসনে মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করে। এছাড়া উপর্যুক্ত বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধানের নিমিত্তে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)-এর সভাপতিত্বে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের পুত্র-কন্যা ভর্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গঠিত কমিটি’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত প্রাসঙ্গিক প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করেছে।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের দাবির পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবি বিবেচনা করে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তার অন্যতম হলো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা’ হিসেবে কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেহেতু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে নিবেদিতভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেহেতু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠিত কমিটি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পুত্র-কন্যাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় ভর্তির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি শর্তসাপেক্ষে বিবেচনার জন্য সুপারিশ করে।