চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন স্বেচ্ছায় অবসরপ্রাপ্ত ঢাবি শিক্ষক আরিফ বিল্লাহর
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৭ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৭ PM
২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা আরিফ বিল্লাহ। গতকাল রবিবার (৫ জানুয়ারি) তিনি চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নিকট আবেদন করেছেন।
ড. আরিফ বিল্লাহ অনেক অবিচার, অপরিসীম মানসিক নির্যাতন ও দুঃখ কষ্ট এবং বেদনা বুকে নিয়ে, বিশেষত স্বীয় স্বাভাবিক জীবন যাপন হুমকির সম্মুখীন হওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে বাধ্য হন উল্লেখ করে আবেদন পত্রে বলেন, গত পনের বছর পতিত স্বৈরাচারের আমলে দেশ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। যেখানে আইনের শাসন ও ন্যায় নীতির কোনো বালাই ছিল না। আমাদের প্রাণপ্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর ব্যতিক্রম ছিল না। মেধা ও যোগ্যতার বিচার বিবেচনা না করে দলীয় আনুগত্য ও স্বার্থই মুখ্য বিষয় হয়ে পড়েছিল। এখানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন না করে এর ব্যতিক্রম দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন প্রচলিত হয়েছিলো। আর এই চরম সংকটকালে আমার একাডেমিক জীবন ধ্বংসের লক্ষ্যে লক্ষ্যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও আমি ষড়যন্ত্রকারীদের নিকট আত্মসমর্পণ করিনি বরং এসবের মোকাবেলায় আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল ছিলাম।
আবেদন পত্রে তিনি বলেন, আমার কর্মস্থল ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বেশ কিছু অনিয়ম বিশেষত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করি এবং বিভাগে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র শিক্ষকদের দলীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবে জুনিয়র শিক্ষকগণ অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। অনেক সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পড়েও তারা যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারেননি। আমি বাধ্য হয়ে তৎকালীন উপাচার্য অফিসে পর পর বেশ কয়েকটি আবেদন করি। যেগুলো এখনও উপাচার্য অফিসে নথিবদ আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অদ্যাবধি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ তো দূরের কথা শুধুমাত্র দলীয় ও রাজনৈতিক কারণে আমলেই নেওয়া হয়নি। বিপরীতে আমার উপর নেমে এসেছিল একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি। বছরের পর বছর আমার আবেক্ষাধীন, কনফার্মেশন ও পদোন্নতির ফাইল কখনও চেয়ারম্যান অফিসে, কখনো রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এবং কখনো উপাচার্য দফতরে ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত আটকে রেখে আমার প্রতি মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং আমাকে একাডেমিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। বিভাগে একে একে ৬ জন শিক্ষক অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। মাত্র ৮/১০ বছর চাকুরীর অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেউ কেউ অধ্যাপক হয়েছে। আর আমার কেবল একটিমাত্র ফাইল ৬ বছর আটকে রাখা হয়েছে। ফলে আমি দীর্ঘ ২৭ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েও অধ্যাপক হতে পারিনি। এসব যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির শিকার হয়ে এক সময় আি হাঁপিয়ে উঠি। মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ি। এমনকি আমি আমার জীবন নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়ি। তখন আি ব্যক্তিগত ও পরিবারের কথা চিন্তা করে আকস্মিকভাবে মাত্র কয়েক ঘন্টায় অরসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
আরিফ বিল্লাহ বলেন, আমার পিএইচডি ডিগ্রী শেষ হওয়ার পর আমি সোয়াসে পোস্ট ডক্টরাল করার অফার পাই। আমি এক বছরের জন্য ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করি। এছাড়াও আমার ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ায় ভিসা বৃদ্ধির আবেদন করি। কিন্তু বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলেও আমার পাসপোর্ট ফিরে পাচ্ছিলাম না। এ সময় ইষ্ট লন্ডনে আয়োজিত ৭২ এর সংবিধান সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করি। পরে জেনেছিলাম যে আমার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ লন্ডনে বাংলাদেশ সেসময় দূতাবাসের আধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দফতরে প্রেরিত হয়। সে সময় থেকেই আমার বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ শুরু হয়।
আবেদনে সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আমি ঢাকায় আমার এক সহকর্মীকে ফোন করি। এ সময় জনতে পারি তিন দিনের মধ্যে দেশে ফিরে কাজে যোগদান না করলে আমার চাকরি থাকবেনা মর্মে একদিন আগে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি বললাম আমি তো কোনো নোটিশ পাইনি। কোনো ইমেইলও পাঠানো হয়নি। যাহোক আমি জ্বরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। বাসায় বসে বসেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিসা সংক্রান্ত অফিসারদের কয়েকজনকে ফোনে আমার সমস্যার বিষয়ে জানালাম। উনারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। দেশে এসে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে বিভাগে যোগদান করে এ যাত্রায় চাকুরী রক্ষা করলাম বটে, কিন্তু আমার উপর ষড়যন্ত্রের শ্যেন দৃষ্টি অব্যাহত থাকে। যে সব বিষয় এই আবেদনের আদ্যভাগে উল্লেখ করেছি।