পোষ্য কোটা ইস্যুতে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিতে চলছে রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়   © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে চলমান বিতর্ক যেন দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এই কোটার হার কমালেও সেটা ‘প্রহসনমূলক’ বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। আগামী ২ জানুয়ারির ভিতরে পোষ্য কোটা বাতিল না করলে প্রশাসন ভবনসহ প্রতিটা ভবনে তালা ঝুলানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কয়েকজন সমন্বয়ক। 

প্রশাসন ইস্যুটি নিয়ে কার্যকর কোনো সমাধানের পথে হাঁটছে না, বরং ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করছেন। কারণ বিগত বছরগুলোর তথ্য বলছে, সাধারণত পোষ্য কোটায় ১১০ জনের কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। ফলে পোষ্য কোটার হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করলেও কার্যত এই কোটার উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাদ না দিয়ে প্রতিবছর এক শতাংশ করে কমানো প্রশাসনের 'ধূর্ততা' বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেকে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১১৩ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ জন ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৯৪ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এই কোটার হার ৩ শতাংশ অর্থাৎ ১১৮টি আসন বরাদ্দ আছে। যেখানে কোনো বছরই ১১৮ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তিই হয়নি সেখানে নামমাত্র হার কমিয়ে এই কোটায় আদৌ কোনো প্রভাব পড়ছে না। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন রাবির পাঁচ শিক্ষার্থী। ১৮ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। পরদিন ১৬ নভেম্বর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেন প্রশাসন। এরপর ৮ ডিসেম্বর দুপুরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে 'রেড কার্ড' প্রদশর্ন করেন শিক্ষার্থীরা। 

পরদিন পোষ্য কোটা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিযোগিতায় কোটার পক্ষে কেউ অংশগ্রহণ না করায় সিনেট ভবনের উত্তর পাশের প্যারিস রোডে পোষ্য কোটার প্রতীকী দাফন করেন তারা। একদিন পর আবারো মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসন থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা দিতে দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটা অযৌক্তিক কোটা বাতিলের জন্য আমাদের কেন এত আন্দোলন করা লাগবে? পোষ্য অবশ্যই বাতিল করা লাগবে। প্রশাসন যে ৩ শতাংশ কোটা বহাল রেখেছে এটা মূলত একটি সুবিধাভোগী সিদ্ধান্ত। বিপ্লবীরা কখনো সুবিধাভোগী সিদ্ধান্ত নিবে না। এমন টলমল কর্মকাণ্ডের সাফার করতে হবে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে। পোষ্য কোটা বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ও স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করেও কিন্তু কোনো যায় আসছে না। এটা একটা প্রহসন ছাড়া কিছুই না। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তা বাতিলের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করি, প্রশাসন এই অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করবেন। 

ফিসারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিন পার্সেন্ট কেন এক পার্সেন্ট রাখলেও আমি এই কোটার বিরোধিতা করব। এই কেটা না থাকাটা স্বাভাবিক মনে করব। সংবিধানে কোটা আসছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের সুবিধা দিতে। এটা তো সবাই জানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন সুউচ্চ জায়গায় যারা এসেছে তারা কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তালিকায় পড়ে না। তাদের জন্য কোটা রাখা মশকরা করার শামিল। 

তিনি আরও বলেন, পোষ্য কোটা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোনো সম্মানের ব্যাপার না, বরং সবার জন্য অবমাননাকর। এটা নিয়ে যত বেশি কথা হবে তত বেশি অপমানের ব্যাপার হবে। বিগত বছরগুলোতে ফেল করেও অনেকে ভর্তি হয়েছে। এটা আরো খারাপ। এটার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। আমি মনে করি না পোষ্য কোটা থাকা উচিত। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা আসলেই ঠিক যে কোনো বছরই পোষ্য কোটায় ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। আমরা এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এখনো মিটিং চলমান রেখেছি। আশা করি, দু-চার দিনের মধ্যে একটা সমাধান আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ