আন্দোলনে যাওয়ায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ সারা শরীরে সিগারেটের সেঁক দেয়

“কোটা প্রথা বাতিল করো না হয় আমায় গুলি করো” প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ানো ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম
“কোটা প্রথা বাতিল করো না হয় আমায় গুলি করো” প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ানো ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম  © ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

২০০৮ সালে কোটা সংস্কারের আন্দোলন অংশগ্রহণ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কামরুল ইসলামকে সারা শরীরে সিগারেটের সেক দেয় তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতারা। ঘটনার ১৬ বছর পর এ ঘটনার বিচার এর আশায় ফেসবুকে পোস্ট করেন সাবেক এ শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার ( ৬ সেপ্টেম্বর) তিনি তার ফেসবুক একাউন্টে এ বিষয়ে লেখেন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগোতে পিএইচডি অধ্যায়নরত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০০৭-২০০৮ সেশনের শিক্ষার্থী।   

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অতীতে যারা ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন সেসব শিক্ষার্থী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘যারা সুনির্দিষ্ট ভাবে মামলা করার কথা বলতেছেন, খুব ভালো কথা, ১০০% একমত। কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন: 

‘আমাকে ফজলুল হক হলে নিয়ে প্রচণ্ড ভাবে মারা হলো, সারা শরীরে সিগারেটের সেক দেওয়া হলো, আমি তো তাদের কাউকে চিনি না (২০-৩০ জন)। তাহলে মামলাটা কিভাবে করবো?’

তিনি আরো লেখেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসার জন্য গেলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জগন্নাথ হলে পিটানো হলো। ৩০-৪০ জন জড়িত ছিলো। আমি তো তাদের কাউকে চিনি না, তাদের নামও জানিনা, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে সেটাও জানি না। আগে-পরে কখনো দেখাও হয়নি। তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিভাবে করবো?’ 

‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ক্লাস করতে গেলে শিক্ষকের সামনেয় আমার উপর হামলা হয়েছিলো। সেই হামলায় একজন ছাড়া আমি কাউকে চিনি না (মুহসিন হলের বাপ্পি, দর্শন বিভাগ ২০০৫-০৬ সেশন। সাবেক সহ-সভাপতি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি)। যে একজনকে চিনি তাও জানিনা আজ কোথায় আছে। তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে মামলায় বা করবো কিভাবে?’

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের নির্যাতনের মুখে দেড় বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরলেন পাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী

নির্যাতনের আরো বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেন, ‘পড়ালেখা শেষে ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেজিস্টার বিল্ডিং এ গিয়েছিলাম ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে। সেখানে মুহসিন হল থেকে একগাদা ছেলে পেলে এসে আমার উপর হামলা করে। তৎকালীন হলের প্রশাসনিক প্রধান দাদা সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় দিয়ে আসেন। আমি তো তাদের কাউকে চিনি না তাদের নাম জানিনা ‘

‘আমার কাছে প্রমাণ বলতে শুধু আছে ফজলুল হক হল, মুহসিন হল, জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতাকর্মীদের লিস্ট। এই নেতাকর্মীদের লিস্ট ধরে মামলা করা ছাড়া আমার আর কি উপায় আছে?  

এই স্বাধীন-দেশে আমার বিচার পাওয়ার অধিকার তাহলে কিভাবে নিশ্চিত হবে? আমার মতো তো অনেকেই আছে। তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার কে সংরক্ষণ করবে? জবাব চাই! পরামর্শ চাই!’

১৫ আগস্ট আরেক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ২০০৮ সালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে “কোটা প্রথা বাতিল করো না হয় আমায় গুলি করো” প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়াই আমি। কখনো বিসিএস এর চেষ্টা করিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ইমিগ্রেশন ও মানবাধিকার নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করার ইচ্ছা আমাকে আটলান্টিকের আরেক প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে নিজের স্বার্থের প্রয়োজন পড়ে না। 

‘২০০৮ সালে আরেকটি আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলাম, মাদ্রাসার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগসহ ১৩ টি সাবজেক্টে মাদ্রাসা ছাত্রদের ভর্তি বন্ধের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন করেছিলাম।  ১৬ বছর পার হওয়ার পরও একই আন্দোলন করতে গিয়ে হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণ দিতে হলো’

আরও পড়ুন: ইবির হলে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগের, ভিডিও ধারণ

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর সাথে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস অনলাইনে যোগাযোগ করে। ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা সিগেরেটের সেক দেওয়ার সেদিনের ঘটনার বিষয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০০৯ সালের মার্চ মাস। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার ২/৩ মাস হল।  আমি আর আমার এলাকার আরেকে বন্ধু সেও ঢাবির, থাকতো মহসিন হলে। আমি আর আমার বন্ধু ফজলুল হক মুসলিম হলে সন্ধ্যার দিকে হাটছিলাম। 

সেসময় কেউ একজন দেখিয়ে দেয় এরা আন্দোলনে ছিল। যারা আমাদের দুজনকে মারছে তাদেরকে আমি চিনতামনা।  ফজলুল হক মুসলিম হলে আমার  কয়েকজন ইয়ারমেট জানালো তৎকালীন ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের বেশিরভাগ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিল।

ঘটনার মুহূর্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে হলের বাহির থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিয়ে যায় হল গেস্টরুমে (অতিথিকক্ষে)। মোবাইল চেক করা শুরু করে। তখন আমার আবাসিক হল মহসিন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের ফোন দিয়ে খোজঁ খবর নেয় তারা। 

তারপর তারা দেশিয় অস্ত্র লাঠি আর রড দিয়ে নির্যাতন শুরু করে। সেগুলো দিয়ে আমাদের বেদম পেটানো হয়। ছাত্রলীগের কয়েকজন  ইট দিয়ে হাত-পায়ের নক থেতলে দেয়। কয়েকজন সিগেরেট দিয়ে সারা শরীরে সেক দেওয়া শুরু করে।

এ নির্যাতনে ২০/৩০ জন জড়িত ছিল। প্রায় শতাধিক ছাত্রদের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। সবাই দাড়িয়ে দেখছিল। আমাদের দুজনের উপর সমানতালে নির্যাতন চলে।   


সর্বশেষ সংবাদ