১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের গুজব, যা জানা যাচ্ছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

‘১ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল পাবলিক ইউনিভার্সিটির ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিত থাকবে’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনই এক পোস্ট বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব পোস্টগুলোতে শত শত ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকে এ পোস্ট আবার নিজেদের টাইমলাইনেও শেয়ার করছেন। অনেকে আবার বিষয়টিকে বলছেন গুজব। শিক্ষার্থী বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

মূলত শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা রয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের। ধারাণা করা হচ্ছে, শিক্ষকদের কর্মবিরতির পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এমন পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে, ঈদের ছুটি কাটিয়ে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে ১ জুলাই থেকে। এছাড়া এদিন রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসও। একইসঙ্গে এদিন ঢাবিসহ আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর কথা। আবার সেদিন থেকেই যদি শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যান তাহলে ক্লাস-পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা শনিবার দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, কর্মবিরতির বিষয়ে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ঘোষণা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নেই। যে পোস্টের কথা বলা হয়েছে, সেটি গুজব।

অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, কর্মবিরতি সংক্রান্ত কর্মসূচি নিয়ে আমরা আগামীকাল রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করবো। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় জানিয়ে দেব। বেলা ১২টায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ জুন বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিনদিন সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা করেন। তাছাড়া আগামী ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা রয়েছে শিক্ষকদের। গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

সর্বজনীন পেনশন শিক্ষকদের কাছে কেন পছন্দ নয়, সে বিষয়ে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে ফেডারেশন। তারা বলছে, এ পেনশন স্কিম বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কর্তনের মাধ্যমে শিক্ষকসমাজের মর্যাদা হনন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহী হবেন না। যদি কোনো শিক্ষক উচ্চতর পদে সরাসরি বা নতুন নিয়োগ পান, তাহলে তাঁকে বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থা ত্যাগ করে সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে হবে, যা তাঁর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

জানতে চাইলে ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দাবির ব্যাপারটি আমরা শিক্ষামন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীসহ প্রায় সবাইকেই জানাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কেউ আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেননি। তাই আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। শিক্ষকদের তো আর কিছু নেই, আছে শুধু আত্মমর্যাদা। এখন আমরা মনে করি, বর্তমান প্রক্রিয়ায় সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হলে শিক্ষকরা বঞ্চিত হবেন, বৈষম্যের শিকার হবেন।


সর্বশেষ সংবাদ