সংকট-সমস্যায় ধুঁকছে পাকিস্তান আমলে তৈরি ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ  © ফাইল ছবি

অপরিচ্ছন্ন, ভঙ্গুর, ঝুঁকিপূর্ণসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ১৯৬৬ প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই মসজিদের বয়স ৫৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আসেনি  অবকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন। মসজিদটির সংস্কার বা উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অজুর করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ট্যাপ। রয়েছে ওয়াশরুম সংকটও। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনা মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ভোগান্তিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এসব সংকট আর সমস্যা নিয়ে ধুঁকছে পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় মসজিদ।

মসজিদের জন্য আলাদা ফান্ডের কোনো ব্যবস্থা নেই। মসজিদের ছোট ছোট সংস্কারকাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে নিয়ে করা হয়। তাছাড়া বড় ধরনের সংস্কারকাজে এখন বিশ্ববিদ্যালয় যাবে না। -সভাপতি

প্রতিদিন নামাজ পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনের পর দিন এসব সমস্যা দেখে আসলেও সমাধানের কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। মাস্টারপ্ল্যানের দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন অতিবাহিত হলেও এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। ফলে প্রতিনিয়তই এসব সমস্যার মোকাবিলা করে নামাজ পড়তে হচ্ছে শতশত শিক্ষার্থীদের। 

শুধু তাই নয়, কম ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক ব্যবহারে কারণে নামাজের পূর্বে প্রায়ই তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। এমনকি মহিলাদের জন্য নির্ধারিত অজুখানায় পুরুষের অবাধ প্রবেশ, ওয়াশরুম তালাবদ্ধ থাকা, পানির ট্যাপ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা যেনো নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করে মসজিদটিকে আধুনিক ও প্রযুক্তি সম্পন্ন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, মসজিদের সামনে হকার-ভিক্ষুকদের উৎপাত বেড়েই চলেছে দিন দিন। এদের নিয়ন্ত্রণেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায় না। অন্যদিকে মসজিদে নেই কোনো ধরনের ইসলামিক বই। যে কয়েকটি কোরআনের বই দেখা যায়, সেগুলোও ধুলোবালিতে ভরে থাকে। সংরক্ষণের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবেশ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় মসজিদে কোরআন-হাদিসসহ প্রায় ৩০০-৪০০ ইসলামিক বইয়ের লাইব্রেরি ছিল। এগুলো কাঠের আলমারিতে রাখার কারণে ২০০৫ সালের দিকে উইপোকা সব বই নষ্ট করে ফেলে। এরপর মসজিদে আর বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। ফলে অল্প কিছু বই থাকলেও সেগুলো পড়ার অনুপযুক্ত। তাছাড়া বর্তমানে বড় দুইটি বইয়ের তাকে ৫০-৫৫টি কোরআন শরিফ ছাড়া বড় দুইটি তাক সম্পূর্ণ খালি পড়ে রয়েছে।

হাজার হাজার মানুষ ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। সুইপার দিনে একবার এসে পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। এখন থেকে দিনে একাধিকবার পরিষ্কার করলে এ সমস্যা কেটে যাবে। -ইমাম

মসজিদের সংকট-সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, রমজান আসলেই এ সমস্যা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ মাসে মুসাল্লির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার ফলে লম্বা লাইন ধরে অজু করতে হয় তাদের। ফলে অনেক মুসাল্লিদের মহিলাদের অংশে অজু করতে হয়। তাছাড়া এসময়টাতে পানির সংকট যেন নিত্যসঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদের মোট পাঁচটি টয়লেটের দুটোই তালা বদ্ধ। খোলা থাকা বাকি ৩টা থেকে চড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। টয়লেটের পাশে থাকা প্রস্রাবের স্থানগুলোরও একই চিত্র। এছাড়া ওজুর জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি ট্যাপও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একই চিত্র মহিলাদের ওজুর ট্যাপগুলোতেও।

মসজিদের ইমাম নাজির মাহমুদ বলেন, তালাবদ্ধ দুটি ওয়াশরুমের মধ্যে একটি ওয়াশরুমের সংস্কার কাজ চলছে। বাকিটা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য সংরক্ষিত। সংস্কার কাজ শেষ হলে বাকিটা খুলে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ ইসলাম বলেন, রমজান মাস আসলেই মসজিদের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান আর ভিক্ষুকদের সমাগমের কারণে মুসল্লীদের নামাজ আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এছাড়া মসজিদের টয়লেটগুলো বেশিরভাগ সময় নোংরা থাকে। টয়লেটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

অপরিচ্ছন্ন ওয়াশরুমের বিষয়ে মসজিদের ইমাম নাজির মাহমুদ বলেন বলেন, হাজার হাজার মানুষ এসে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। সুইপার দিনে একবার এসে পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। বেশি মানুষ ব্যবহার করায় কিছুটা অপরিষ্কার থাকে। এখন থেকে দিনে একাধিকবার পরিষ্কার করলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অজুর করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ট্যাপ। রয়েছে ওয়াশরুম সংকটও। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনা মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ভোগান্তিতে যোগ করেছে নতুন মত্রা। -মুসল্লিদের ভাষ্য

জানতে চাইলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মসজিদের জন্য আলাদা ফান্ডের কোনো ব্যবস্থা নেই। মসজিদের ছোট ছোট সংস্কারকাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে নিয়ে করা হয়। তাছাড়া বড় ধরনের সংস্কারকাজে এখন বিশ্ববিদ্যালয় যাবে না। 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের শুরুর দিকে রয়েছে সেন্ট্রাল মসজিদের আধুনিক ও ‍দৃষ্টিনন্দন নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প। যখন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন শুরু হবে, প্রথম দিকেই মসজিদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তাছাড়া অন্যান্য ছোট ছোট সংস্কার কাজ যেমন, সিসিটিভি ক্যামেরা পুনঃস্থাপন, নতুন কার্পেট যুক্ত করাসহ অন্যান্য কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ