বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাবির পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে পিঠা উৎসব

পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে পিঠা উৎসব
পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে পিঠা উৎসব

শীতকাল এলেই বাঙালিদের ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। তবে শহরের পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেই স্বাদ নিতে পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় ‘পিঠা উৎসব- ২০২৪। আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় পিবিএস মহাকবি অশ্বঘোষ কালচারাল ক্লাব এর উদ্যোগে প্রথমবারের মত পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। পিঠা উৎসবে  ৫টি স্টলের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমারি পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন করে পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

প্রায় ৫০ প্রকারের শীতকালীন পিঠার আয়োজন করা হয় এই উৎসবে। জনপ্রিয় পিঠাপুলির মধ্যে ছিল, শামুক পিঠা, ফুগ পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা তেলের পিঠা, ফুলমুড়ি পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশী পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতুই পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, দুধ চিতই, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, চুটকি, চাপড়ি, ক্ষীর কুলি, ঝুরি পিঠা, ঝিনুক, সূর্যমুখী, চাঁদ পাকানো, ছিট, সুন্দরী পাকানো, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, পানতোয়া, মালপোয়া, মালাই,আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, ফুল পিঠা, সেমাই পিঠা প্রভৃতি। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা এবং চিতুই পিঠা। কালের গভীরে কিছু পিঠা হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও এখন পিঠা পাওয়া যায়। পিঠা তৈরির সাধারণ উপাদান হিসেবে চালের গুঁড়া, ময়দা, খেজুর গুড় বা চিনি, নারকেল, তেল এবং কিছু কিছু পিঠাতে মাংস ও সবজি ব্যবহার করে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। শীতকালীন পিঠা উৎসব উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের  ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। 

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ষড়ঋতুর এ দেশে বাঙালির খাদ্য তালিকায় দেখা যায় নানা বৈচিত্র্য। শীত মৌসুমে এ বৈচিত্র্যে প্রাণদান করে পিঠা-পুলি। শীতকালের পিঠা বানানোর উৎসব বাঙালির সংস্কৃতির একটি অন্যতম বৈচিত্র্য। পিঠা শুধু আমাদের জন্য লোকজ খাবারই নয়, পিঠা আমাদের বাঙালির স্মৃতি ও লোকজ সংস্কৃতির ভাণ্ডার ও ঐতিহ্যও বটে। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টান্ন হিসেবে পিঠার জনপ্রিয়তাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,  এই পিঠা উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে।

পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নীরু বড়ুয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে শিক্ষার্থীদের মন,মনন ও মানসিকতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে শীতকালীন পিঠা উৎসব আয়োজন  বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে এই পিঠাপুলি উৎসবে আয়োজন করেছে এর মাধ্যমে তাদের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটেছে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ডিভাইস থেকে সরে এসে এমন সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্যিই প্রশংসানীয়। 

পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক রোমানা পাপড়ি বলেন, বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির পরিচয় বা চর্চা করার লক্ষ্যেই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পিবিএস মহাকবি অশ্বঘোষ কালচারাল ক্লাবের সূচনা। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ক্লাবের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রথমবারের  মতো পিঠা উৎসব-১৪৩০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ছিল বিভাগের প্রাঙ্গণ। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা কবির কেয়া বলেন, শীত মানেই পিঠা। শীতের এই সময়টাতে আজকাল পৌষ পার্বণ বিলুপ্ত প্রায়। তবে আজকে আমাদের বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত পিঠা উৎসব পুরোনো শীতের আমেজ, শীতের আনন্দ ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। নানা ধরনের পিঠা পুলির আয়োজন ছিল বিভিন্ন স্টলে। সব মিলিয়ে খুবই স্মরণীয় ভাবে শীতকে উদ্‌যাপন করা হয়েছে, খুবই আনন্দমুখর পরিবেশ ছিল। প্রথমবারের মতো পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের এই অভিনব পিঠা উৎসব এর আয়োজনের মাধ্যমে পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলোকে উজ্জীবিত করে তুলার জন্য ধন্যবাদ। 

পিবিএস মহাকবি অশ্বঘোষ কালচারাল ক্লাবের সার্বিক তত্ত্ববধানে মডারেটর হিসেবে ছিলেন প্রভাষক রোমানা পাপড়ি এবং কো- মডারেটর হিসেবে ছিলেন প্রভাষক মো: রাকিবুল হাসান।

পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের পিঠাপুলি উৎসবে উপস্থিত ছিলেন এই বিভাগের সুপার নিউমারারি প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক ড.দিলীপ কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. বেলু রানি বড়ুয়া, অধ্যাপক ড.বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, সহযোগী অধ্যাপক ড.শান্টু বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, সহকারী অধ্যাপক রত্না রাণী দাস, সহকারী অধ্যাপক জ্যোতিষী চাকমা, প্রভাষক রোমানা পাপড়ি, প্রভাষক রাকিবুল হাসান,প্রভাষক আফতাবুল ইসলাম তন্ময়।

এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ডিন ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান খান,অধ্যাপক ড.এটিএম সামছুজ্জোহা, ইউ এন ডিপির রিসার্সের অ্যাসোসিয়েট  আরজু আফরিন ক্যাথি।


সর্বশেষ সংবাদ