রাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রশাসনের সঙ্গে বরখাস্ত শিক্ষকের বাগবিতণ্ডা

আইবিএ ইনস্টিটিউটের নিজস্ব কারিকুলাম পুনর্বহালের দাবি

রাবিতে আইবিএ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রশাসনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বরখাস্ত শিক্ষক
রাবিতে আইবিএ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রশাসনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বরখাস্ত শিক্ষক  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব কারিকুলাম পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে ইনস্টিটিউটের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে সাবেক ভিসির জামাতা শাহেদ পারভেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার তুমুল বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। 

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আইবিএ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধনে জড়ো হন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের জামাতা ও আইবিএতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শাহেদ পারভেজ। 

এক পর্যায়ে শাহেদ পারভেজের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা শাহেদ পারভেজের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি আইবিএতে কর্মরত শিক্ষক হিসেবেই নিজের পরিচয় দেন। শাহেদ পারভেজও এসময় ছাত্র উপদেষ্টার আইডি কার্ড দেখতে চান। 

এসময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শাহেদ পারভেজকে নিজেদের ফ্যাকাল্টি মেম্বার পরিচয় দিয়ে আগের কারিকুলাম পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলছে, তার বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং তার বেতন বন্ধ রয়েছে। তিনি বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে রেগুলার নন।

ঘটনার প্রসঙ্গে শাহেদ পারভেজ জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী আমি আইবিএতে কর্মরত শিক্ষক হিসেবেই আছি। আমাকে সাময়িক বরখাস্তের কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। তাছাড়া আমি আমার নিয়োগ নিয়ে চিন্তা করছি না; আইবিএ শিক্ষার্থীদের কারিকুলাম পরিবর্তনের যৌক্তিক দাবির সাথে সহমত জানিয়ে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’

আরও পড়ুন: প্রশ্নফাঁস-নিয়োগ বাণিজ্যে অভিযুক্ত শিক্ষককে এবার নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৭তম সিন্ডিকেট সভার ১৯ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রভাষক এ. টি. এম. শাহেদ পারভেজের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ লিটন এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘আজকের ঘটনায় রীতিমতো আমি লজ্জিত। একজন শিক্ষক যেভাবে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিচ্ছেন তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া শাহেদ পারভেজকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটি নির্বাচনে শিক্ষকদের ভোটার তালিকাতেও তার নাম ছিল না।’

আইবিএ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের দাবিগুলো নিয়ে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যা করা সম্ভব তা করা হচ্ছে, আমি সেভাবেই তাদেরকে আশ্বস্তও করেছি। কিন্তু একজন বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক যদি এভাবে শিক্ষার্থীদেরকে উস্কানি দেন, সেখানে অন্য কিছু আছে কিনা আমরা তা খতিয়ে দেখব।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত আরা বেগম বলেন, ‘নতুন সেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিফর্ম কারিকুলাম চালু করেছে। এটি সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে, কাজেই এখানে মন্তব্য করার আর কিছু নেই। শিক্ষার্থীরা দাবি জানানোর আগেও, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়েছিল এবং এখনও হচ্ছে। এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। কিন্তু বহিষ্কৃত একজন শিক্ষককে নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করছে, সেটিকে আমি সঠিক মনে করছি না।’

প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বর নিজস্ব কারিকুলাম পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদী র‌্যালি ও মানববন্ধন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরের আশ্বাসে তারা মানববন্ধন থেকে ফিরে যায়। তবে দুইদিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সমাধান না আসায় পুনরায় মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ