চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে রাবিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন
দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে ' দ্য রোল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি টুয়ার্ডস্ ফোর্থআইআর' শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। 

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সম্মেলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. সাহেদ জামানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের সহ-আহ্বায়ক পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক এম. ছায়েদুর রহমান। সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম খান, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. সাবিরুজ্জামান ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক তারান্নুম নাজ।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের প্রথম দিনে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। এছাড়া এদিন ২২টি টেকনিক্যাল সেশন এবং দ্বিতীয় দিনে মূল প্রবন্ধসহ ১০টি একাডেমিক সেশনে মোট ৪২৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে বলে নির্ধারিত আছে। এর মধ্যে ২০৭টি সরাসরি উপস্থাপন ও ২১৬টি পোস্টার রয়েছে। এছাড়া একটি প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সেশনসমূহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন, সত্যেন্দ্রনাথ বোস একাডেমিক ভবন, ড. মুহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদা একাডেমিক ভবন ও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকে প্রায় ২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

সম্মেলন উদ্বোধন করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকার দেশের সুষম উন্নয়ন ও সেই উন্নয়নকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সমন্বয় করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে এসব পরিকল্পনার সুফল দৃশ্যমান হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ২৫  হাজার মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর ফলে শিল্পক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেমন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।

তিনি আরো বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশে থেকে বিদেশে সেবা দান করছে। এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা যাচ্ছে। সরকারের গৃহিত আরো যেসব পদক্ষেপ আছে তার মধ্যে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, সমাজের পিছিয়ে পড়া ও দুর্গত মানুষের মধ্যে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন অবকাঠামো যেমন রেলপথ ও সেতু নির্মাণ, বিমান বন্দর, নদীর তলদেশে টানেল, সড়ক ও মহাসড়ক, ফ্লাইওভার নির্মাণ ইত্যাদি। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এক যুগান্তকারী প্রভাব পড়বে।

সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাবি উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুরুতে আমাদের কাছে একটি কথার কথা হিসেবে এলেও বাস্তবক্ষেত্রে এটি আজ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাড়িয়েছে। সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরন্তর গবেষণা ও উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও কারিগরী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে উচ্চশিক্ষায় সংযোজন ইত্যাদির মাধ্যমে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হয়েছে।

ফলে ব্যবসায় উদ্যোগ বা স্টার্টআপের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ মানুষ দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, নিরবিচ্ছিন্ন ও সস্তা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা আজ বাস্তবের মুখোমুখি হয়েছে। উপাচার্য এই অর্জনের পাশাপাশি স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরন্তর গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সেই লক্ষ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে এসেছে আমাদের সামনে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল অর্জনে সরকার ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সেসবের মাধ্যমে শিল্প উৎপাদনসহ মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের উন্নয়নে বৃহৎ অবকাঠামোগুলি নির্মাণ শেষে ব্যবহার শুরু হওয়ায় মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে তা বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এর ফলে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হবে।

সম্মেলনের অপর পৃষ্ঠপোষক রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) তাঁর বক্তব্যে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এর সুফল গ্রহণে প্রয়াসী হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকারের গৃহিত বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফলকে সমন্বয় করতে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, গবেষণা ও উদ্ভাবন। সেই লক্ষ্যে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করছি। 


সর্বশেষ সংবাদ