জাবিতে হল ছাড়তে বাধ্য হন ছাত্রীরা, ছাত্ররা চাপমুক্ত
- জোবায়ের আহমেদ, জাবি
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০৩ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:১৯ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পরপরই ছাত্রীদের আবাসিক হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। অথচ ছাত্রদের ক্ষেত্রে এ নিয়মের আওতায় আনতে প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। অপেক্ষাকৃত অধিক গণরুম সংস্কৃতি ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে তারা পড়াশোনা শেষ হলেও দীর্ঘদিন হলে অবস্থান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মোট ৯টি আবাসিক হলে পাঁচ হাজার ৪৭২টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে প্রায় ১০ হাজার ছাত্র রয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রীদের আটটি আবাসিক হলে আসন সংখ্যা চার হাজার ৭৩৬টি। এর বিপরীতে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে পাঁচ শতাধিক অছাত্র আছেন। এর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৫০, মীর মশাররফ হোসেন হলে শতাধিক, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৬০-৭০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দেড় শতাধিক, মওলানা ভাসানী হলে শতাধিক, আল বেরুনী হলে অর্ধশত, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলেও অর্ধশত এবং শহীদ রফিক-জব্বার হলে প্রায় দেড় শতাধিক অছাত্র থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষা শেষে দু’এক বছর অতিরিক্ত সময় হলে থাকা ছাত্রদের জন্য একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
৪৩তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যম্পাসকে বলেন, ‘আমি বর্তমানে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির প্রস্ততি নিচ্ছি। মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আমার জন্য এ সময়ে বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে চাকরির জন্য পড়াশোনা করা কঠিন। ক্ষমতাসীন দলের ছেলেরা বছরের পর বছর অবৈধভাবে থাকছে, সেটা প্রশাসন দেখে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতিকে আমি সম্মান জানাই। যত দ্রুত সম্ভব হল ছাড়ার চেষ্টা করবো।’
এদিকে বর্তমান আটটি ছাত্রী হলের ৪৫তম ব্যাচের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ছাড়া সবাই নির্ধারিত সময়ে হল ছেড়েছেন। এ বিষয়ে ৪৫তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমিন আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসেই মধ্যেই হলে ছেড়ে দিই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইসলামনগর থেকে চাকরির পড়াশোনা করছি। অথচ আমার সিনিয়র ৪৩, ৪৪ ছাড়াও ৪২ ব্যাচের কয়েকজন ভাইকেও দেখেছি এখনও হলে অবস্থান করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বরাবরই দেখে এসেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অপসংস্কৃতি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, এ নিয়ম ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার দ্য ডেইলি ক্যম্পাসকে বলেন, আমরা সবার ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়ে হল ছাড়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখি। তবে ছাত্রদের ক্ষেত্রে মূলত দীর্ঘদিন থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও দু’এক বছর বেশি থাকার একটি কালচার চলে আসছে। এ কালচার নিঃসন্দেহে যৌক্তিক নয়। সামনের দিনগুলোতে ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়ে হল ছাড়তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রশাসন হল ছাড়াতে সক্ষম হলেও ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রশাসন কেন পারছে না, এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, ‘আমার মনে হয়, ছাত্রীদের মা-বাবা চান তার মেয়েরা বাসায় আসুক, পড়াশোনা করুক, চাকরির জন্য পড়ুক। বাসায় গেলে পড়াশেনার ব্যাপারে মা-বাবারাও সচেতন থাকতে পারেন।’
আবাসন সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আবাসন সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি। সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই নতুন আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বাকি নতুন হলগুলো চালু করার ক্ষেত্রে জনবল সংকট আছে। জনবল সংকট কেটে গেলে সবগুলো হল উদ্বোধন করতে পারলে এ সংকট আর থাকবে না। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া অছাত্রদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’