সন্তান কেন্দ্রে ভর্তিযুদ্ধে, বাইরে অভিভাবকদের অন্যরকম পরীক্ষা
- মারুফ হোসেন মিশন, রাবি
- প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ১১:৫৭ AM , আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০৮ PM
দীর্ঘ এক যুগের লালিত স্বপ্ন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম। উদ্দেশ্য একটাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া। উচ্চ শিক্ষায় নিজের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। আর এটির জন্য প্রাথমিক ধাপ হলো ভর্তি পরীক্ষা। যেটি অর্জন করতে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এই স্বপ্ন পূরণে অন্যতম সারথি হলো মা-বাবা।
সোমবার (২৯ মে) 'সি' ইউনিটের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জড়ো হয়েছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে অবস্থান করলেও কেন্দ্রের বাইরে কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখে গেছে অভিভাবকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন, মমতাজ উদ্দীন একডেমিক ভবন, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন, চারুকলা অনুষদ, কৃষি অনুষদ ও বিজ্ঞান ভবনগুলোর আশেপাশে অভিভাবকদের উপস্থিতি প্রবলভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, আম চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার চত্বর, ইবলিশের মাঠ ও হবিবুর মাঠে অভিভাবকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
কেউ কেউ ঘাসের ওপর মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে, কেউ গাছের নিচে পেপার বিছিয়ে, কেউ চেয়ারে বসে, কেউ পত্রিকা পড়ছেন। কেউ বই পড়ছেন, কেউবা আবার ছাতা বিছিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন সন্তানের জন্য। সবার কপালে একটা চিন্তার প্রলেপ রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন অভিভাবকরা নিজেরাই ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
জীবনকে কাঙ্ক্ষিত রূপ দেওয়ার পথে অন্যতম সিঁড়ি হলো এ ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিলেও ছায়া হিসেবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সবসময়ই পাশে থাকেন বাবা-মায়েরা। যা একজন সন্তানের মানসিক প্রফুল্লতায় অনেকটাই উজ্জীবিত থাকে। এমন সময়ে বাবা-মায়ের সাপোর্ট আলাদা একটা শক্তি যোগাতে সহযোগিতা করে। ফলে একজন সন্তানের জন্য সফলতার পথ তরান্বিত করতে সহজ হয়।
এমনই কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে। তারা জানিয়েছেন, সন্তানদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাদের সুপ্ত অনুভূতি। সন্তানকে নিয়ে দেখা তাদের স্বপ্ন।
খুলনা থেকে আসা অভিভাবক মনছুর আলী বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের পরীক্ষা। অনেক দূর থেকে এখানে এসেছি। উদ্দেশ্য একটাই আমার সন্তান যেন এখানে চান্স পায়। আমার সন্তান পরীক্ষায় বসার পর থেকেই সার্বক্ষণিক চিন্তায় হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই ভর্তি পরীক্ষা শুধু সন্তানের নয়, আমি নিজেই পরীক্ষা দিচ্ছি।’
ঘাসের উপরে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে থাকা দিনাজপুর থেকে আসা এক বাবা বলেন, ‘সারারাত জার্নি করে সকালে এসে পৌঁছেছি। মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে গেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে। জানি না মেয়েটা কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে।’
ঢাকা থেকে আসা এক অভিভাবক হোসনে আরা বেগম বলেন, 'আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া, ছোটো মেয়েটা যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। কারণ এখানকার পরিবেশটা আমার কাছে দারুণ লেখেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই উচ্চ শিক্ষার জন্য উপযুক্ত ক্যাম্পাস। আল্লাহ যেন আমার মনে আশা পূরণ করেন। আমি আমার মেয়েকে গ্রাজুয়েট হিসেবে দেখতে চাই।’
চট্টগ্রাম থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এসেছি। একটা সিটের আশায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি। অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন সে ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে একটা সিট পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। তবে পরীক্ষাটা যদি বিভাগীয় পর্যায়ে হতো তাহলে এতটা কষ্ট হতো না।’